সাত মাস পর চালক-হেল্পার খুনের রহস্য উদঘাটন, দুই খুনি গ্রেফতার
গ্রেফতার মিরাজ হাওলাদার ও আবু সুফিয়ান সুজন
কাভার্ডভ্যানের মালামাল লুট করার জন্য চালক রিয়াদ হোসেন সাগর ও হেল্পার মো. আলীকে খুন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সাত মাস পরে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে। দুই আসামিকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৮ মে) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, দীর্ঘ সাত মাসের অনুসন্ধান ও প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার (৭ মে) রাতে খুনের ঘটনায় জড়িত মিরাজ হাওলাদারকে (৩০) পতেঙ্গা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবু সুফিয়ান সুজনকে (২১) আকবরশাহ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সাগর ও আলীর খুনে মিরাজ হালদার, সুজন ও রবিউল নামে তিনজন জড়িত ছিলেন। সাগরের পূর্বপরিচিত ছিল খুনিরা। এর মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর আসামি রবিউলকে গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ।
মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের পশ্চিম জোনের উপপুলিশ কমিশনার ফারুক উল হক বলেন, আসামিরা কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেল্পারকে মালামাল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরের দুই তারিখ রিয়াদ ও আলীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাভার্ডভ্যানের ভেতরে খুন করেন আসামিরা। ঘটনার পরের দিন চালকের মরদেহ পতেঙ্গার লিংক রোড ও হেল্পার আলীর মরদেহ জোরারগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
চালক ও হেল্পারকে নাস্তার সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কাভার্ডভ্যানটি নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে না পেরে খুনের পরিকল্পনা
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, মিরাজ ও সুজনকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন তারা। তারা বলেছেন, ২০২০ সালের ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি কোম্পানির গাড়ির যন্ত্রাংশ নিয়ে কাভার্ডভ্যানটি নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন চালক রিয়াদ হোসেন সাগর আর হেল্পার মোহাম্মদ আলী। রিয়াদের পূর্ব পরিচিতি শেখ মিরাজ হাওলাদার আর আবু সুফিয়ান সুজন ঢাকা যাওয়ার কথা বলে তাদের আরেক সহযোগী রবিউল হোসেন বাবুসহ সিটি গেট থেকে ২ অক্টোবর রাত সাড়ে সাতটার দিকে কাভার্ডভ্যানে ওঠেন। এর আগে চালক ও হেল্পারকে নাস্তার সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কাভার্ডভ্যানটি নেওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা। কিন্তু পথিমধ্যে চালক হেল্পারকে ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে না পেরে খুনের পরিকল্পনা করেন।
হেল্পার আলীর দেহ পানিতে ফেলে দেয়। উঠে দাঁড়ালে খুনিরা তার গলায় আবারও ছুরিকাঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মিরসরাইয়ের নাহার এগ্রো পার হওয়ার পর রাত ১২টার দিকে বাবু ড্রাইভারের গলা আর সুজন হেল্পারের গলায় একযোগে ছুরিকাঘাত করেন। মিরাজ গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসেন। একটু সামনে গিয়ে তারা গাড়ি আবার চট্টগ্রামের দিকে নিয়ে আসেন। আরও সামনে এসে হেল্পার আলীর দেহ তারা সড়কের পাশে পানিতে ফেলে দেন। কিন্তু আলী তখনো মারা না যাওয়ায় উঠে দাঁড়ান। তখন খুনিরা পানিতে নেমে তার গলায় আবারও ছুরিকাঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এরপর কাভার্ড্যভানের চালক সাগরের লাশ তারা হালিশহর থানা এলাকার লিংক রোডে ফেলে দেন। তার আগে সাগরের চেহারা থেঁতলে দিয়ে বিকৃত করে দেয়, যাতে কেউ চিনতে না পারে। এরপর কাভার্ডভ্যানের মালামালগুলো বিক্রয় করার জন্য মাল কেনার পার্টির সাথে যোগাযোগ করে তার মোবাইলটি বন্ধ পান। এতে খুনিরা টেনশনে পড়ে যান। পরে গাড়ি থেকে তিন হাজার টাকার তেল বিক্রি করে ও গাড়িতে পাওয়া ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ১৮ হাজার টাকা ভাগ করে নিয়ে যান আসামিরা। এরপর কাভার্ডভ্যানটি বড়পুল এলাকার মনসুর মার্কেটের সামনে রেখে তারা পালিয়ে যান।
সাগরের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হালিশহর থানায় ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে এই খুনের রহস্য উদঘাটন করেন।
কেএম/এইচকে