বেশি লাভের আশায় লকডাউনে চলছিল স্পিডবোট
কাঁঠালবাড়ী পরিত্যক্ত ফেরিঘাট দিয়ে অধিক মুনাফার আশায় লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করা হতো। এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে স্পিডবোট মালিকরা যাত্রী পারাপার করত।
শিবচরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের কাঁঠালবাড়ী পরিত্যক্ত ফেরিঘাটের কাছে পদ্মা নদীতে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যুতে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া স্পিডবোট মালিক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে এ কথা জানায়। তার মালিকানাধীন তিনটি স্পিডবোটের একটিরও বৈধ কোনো কাগজপত্র বা অনুমোদন নেই বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৯ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গত ৩ মে মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় একটি যাত্রীবাহী স্পিডবোট দ্রুত ও বেপরােয়া গতিতে নােঙ্গরে থাকা বালু বােঝাই বাল্ক হেডের ওপর আছড়ে পড়ে দুর্ঘটনায় ২৬ জন যাত্রী নিহত হয়। এই ঘটনায় পাঁচ যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এই ঘটনায় ৪ মে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে রোববার (৯ মে) প্রথম প্রহরে ২টা ৩০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘড়িয়া এলাকা থেকে মামলার ২নং আসামি স্পিডবোটের মালিক চান মিয়া ওরফে চান্দু মােল্লা ওরফে চান্দুকে (৪০) গ্রেফতার করে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, লকডাউনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অধিক মুনাফা লাভের আশায় চান মিয়া স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার চালু রেখেছেন। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চান্দু এবিষয়টি স্বীকার করেছে। দুর্ঘটনার শিকার ওই স্পিডবােটের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়েছিল। এছাড়া স্পিডবােটে যাত্রী পরিবহনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল।
তিনি বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরো জেনেছি অতিরিক্ত মুনাফার লোভে তারা অবৈধভাবে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করত। ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট পারাপার করার বিষয়ে যাত্রীদের ও উৎসাহ দিত। এছাড়া আমরা জানতে পেরেছি, আসামি চান মিয়া ওরফে চান্দু পাঁচ বছর ধরে স্পিডবােটের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের ব্যবসার করে আসছিল। তার তিনটি স্পিডবােটের কোনোটির অনুমোদন ছিল না। দুর্ঘটনার পরপরই আসামি চান্দু আত্মগােপনে চলে যায়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, এ মামলায় চার জন আসামি। প্রধান আসামি চালক পুলিশের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মামলার বাকি দুই আসামি ইজারাদার। আরেকজন পলাতক রয়েছে, তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
অবৈধভাবে যারা স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাওয়া ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট স্পিডবোট ব্যবসা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিআইডব্লিটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, জেলা প্রশাসক, ঘাট ইজারাদার ও মালিক সমিতির সম্মানিত তত্ত্বাবধায়নে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়। অনুমোদনহীন স্পিটবোট নদী পাত্রী বহন করলে অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা গেছে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনকে লুকিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করত। সাধারণ সময়ে তারা যাত্রী পারাপারের দেড়শ টাকা করে নিলেও সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের সময় যাত্রীদের থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা নেওয়া হতো। স্পিডবোটে ২০ জন যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা থাকলেও দুর্ঘটনার সময় ৩২ জন যাত্রী ছিল। এক্ষেত্রে ঘাট ইজারাদার ও ঘাট মালিক সমিতির গাফিলতি পাওয়া গেছে।
এমএসি/ওএফ