ভারতের কালো ছত্রাক নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ
ভারতে ছড়িয়ে পড়া কালো ছত্রাকের (ব্ল্যাক ফাঙ্গাস) দেশে প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এমনকি এই ছত্রাক দেশে এলে এর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
রোববার (২৩ মে) দুপুরে অধিদফতরের স্বাস্থ্য বুলেটিনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক (সিডিসি) অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, এটি নিয়ে কোভিড–১৯ বিষয়ক যে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি আছে তারা নিজেরা আলাপ-আলোচনা করেছেন। তারাই একটি পরামর্শ চূড়ান্ত করবেন। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেরা কথা বলেছি। আমরা বিভিন্ন জেলাগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে কালো ছত্রাকের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আমরা দেব।
বিজ্ঞাপন
নাজমুল ইসলাম বলেন, কালো ছত্রাক নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা চাই, এই কালো ছত্রাক যেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নতুন করে চাপ হয়ে না দাঁড়ায়।
করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের (ধরন) বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত একেবারে নিশ্চিত করোনার ৯টি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি। জিনোম-সিকোয়েন্সিং চলছে। আমরা মনে করি, রিপোর্ট হাতে এলে সংখ্যাটি বেড়ে যাবে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ করার সক্ষমতা অনেক বেশি। কাজেই সাধারণ কোভিড-১৯ এ আমরা যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়েছি, হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা এই কাজগুলো আমাদের আরও জোরেশোরে করতে হবে। অন্যদের করার জন্য আরও বেশি করে মনে করিয়ে দিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
প্রথম ডোজ নেওয়া ১৫ লাখ মানুষের টিকা পেতে বিলম্ব হবে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে চলমান টিকা কার্যক্রমে প্রায় ১৫ লাখ টিকার ঘাটতি থাকায় প্রথম ডোজ নেওয়াদের টিকা পেতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
সেক্ষেত্রে দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার যে পরিমাণ মজুত আছে তা এই সপ্তাহের মধ্যে একেবারেই ফুরিয়ে যাবে। ক্ষেত্র বিশেষে দুয়েকটি কেন্দ্র বাদে তবে যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন এমন ১৫ লাখ টিকাগ্রহীতা নতুন করে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা না আসা পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।
নাজমুল ইসলাম বলেন, সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যে বাড়তি টিকাগুলো আছে, সেগুলো থেকে ঘাটতি টিকা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমরা আশাবাদী, যে খুব শিগগিরই এই সমস্যা সমাধান হবে।
তিনি বলেন, মিক্সড করে (দুই ডোজ দুই প্রতিষ্ঠানের) টিকা কার্যক্রমের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), এফডিএসহ তারা যদি এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরাও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা পেতে চেষ্টা চলছে। টিকার ব্যবস্থা হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া টিকার প্রথম ডোজের কার্যক্রমও শিগগিরই শুরু করতে পারব, যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ করোনা প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমের শুরু থেকেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভর করে আসছিল। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় ধাপে দেশে তিন কোটি ডোজ টিকা পৌঁছানোর কথা থাকলেও সেরাম তা পারছে না। দুই ধাপে ৭০ লাখ ডোজ টিকা দিতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাকি টিকা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় অনিশ্চয়তা।
সেরাম থেকে ৫০ লাখ ডোজের প্রথম চালানটি আসে গত জানুয়ারিতে। ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে টিকা আসে ২০ লাখ ডোজ। তবে কেনা টিকার বাইরে ভারত সরকার তিন ধাপে বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা। সবমিলিয়ে দেশে টিকার মজুত দাঁড়ায় এক কোটি তিন লাখ ডোজ। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ টিকা মজুত নিয়ে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় করোনা প্রতিরোধী গণটিকা কার্যক্রম।
শনিবার (২২ মে) পর্যন্ত ৯৭ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী এখন মাত্র চার লাখ সাত হাজার ৮৭০ ডোজ টিকা অবশিষ্ট আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ২১৮ জন। অর্থাৎ দুই ডোজ মিলিয়ে ৯৭ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। শনিবার ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪১ হাজার ৪৬৭ জন।
টিআই/এফআর