ছেড়ে যাচ্ছে একের পর এক লঞ্চ, ফিরেছে পুরনো রূপ
ঘাটে নোঙর করা লঞ্চের সাইরেন, গাদাগাদি করে যাত্রীদের ওঠানামা, হকারদের ব্যস্ত বেচাবিক্রি- এইতো সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চেনা রূপ। করোনার কারণে চলমান বিধিনিষেধে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় টার্মিনালের চিরচেনা সেই রূপ এতদিন অনুপস্থিত ছিল। তবে দীর্ঘ এক মাস ১৯ দিন পর সোমবার (২৪ মে) থেকে নদীপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। এতে আগের চেহারায় ফিরেছে সদরঘাট।
সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আজ থেকে গণপরিবহন চালু হওয়ায় নদীপথেও যাত্রী চলাচল শুরু হয়েছে। তবে সকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিকেলের দিকে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চাপ বাড়বে। যাত্রীরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সেজন্য কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে লঞ্চ মালিকদের।
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, লালকুঠি থেকে বাদামতলী পর্যন্ত অর্ধশতাধিক লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও বরিশালের মুলাদীগামী লঞ্চ ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পরপর যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বারবার ঘোষণা দিচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি লঞ্চে মোট ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করা হচ্ছে। এ জন্য ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে ৬০ ভাগ বেশি।
বিজ্ঞাপন
ঘাট কর্তৃপক্ষ বলেছে, যদি কোনো লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয় তবে ওই লঞ্চের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
তারা আরও বলেছে, সকাল থেকে চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও মুলাদীগামী লঞ্চ চলাচল করছে। বিকেল ৪টার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলার লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদী বন্দরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকারের যে নির্দেশনা ছিল, আজ থেকে গণপরিবহন চলতে পারবে, সেই অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে ঢাকা নদী বন্দর থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরিধান করে নিরাপদ অর্থাৎ তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে গন্তব্যে পৌঁছায় সেরকম দিকনির্দেশনা দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা নৌ-পুলিশ ও লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে সেই লঞ্চের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করব এবং তাদের লাইসেন্স বাতিল করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ দুপুর ২টা পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ২৩টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আর এখানে এসেছে ১২টি লঞ্চ। ছেড়ে যাওয়া বেশিরভাগ লঞ্চ চাঁদপুরের। তবে এর মধ্যে সকালে ভোলা ও বরিশালের একটি করে লঞ্চ ছেড়ে গেছে। বিকেল ৪টার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো ঢাকা ছেড়ে যাবে।’
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি লঞ্চের মাস্টার বা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা যেন আবহাওয়া অধিদফতরের সংকেত মেনে চলে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে।’
চাঁদপুর থেকে আসা যাত্রী মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে চাঁদপুর থেকে এসেছি। তবে লঞ্চে ভাড়া বেশি রেখেছে। ভাড়া ছিল ১০০ টাকা, নিয়েছে ১৫০ টাকা। তবে ভাড়া বেশি নিলেও ভালোভাবে আসতে পেরেছি, এটাই অনেক।’
টিএইচ/এফআর/জেএস