তীব্র গরমে রাজধানীতে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা
গত কয়েকদিন ধরে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ। সূর্যের প্রখর তাপে তীব্র গরমে নাজেহাল জনজীবন। আজ সোমবার (২৪ মে) কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি পার হয়েছে। তপ্তরোদে মানুষ বাইরে তুলনামূলক কম বের হচ্ছেন। কিন্তু অতিরিক্ত গরমে ঘরের ভেতরেও মিলছে না মুক্তি। কারণ গত কয়েকদিন ধরে এই গরমের মধ্যেই বারবার চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। ফলে বৈদ্যুতিক পাখা না চলায় গরমে আরও কষ্ট পেতে হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
তীব্র গরমের এই সময়ে দফায়-দফায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন রাজধানীর অনেকেই। তারা বলছেন, একদিকে গরম, অন্যদিকে চলছে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা। যে কারণে সাধারণ মানুষ ঘরেও থাকতে পারছেন না।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী নূরুন নাহীদ বলেন, বাইরে গরমের কারণে সাধারণ মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। বাসায় ফিরলেও শান্তি নেই। একে তো তীব্র গরম এর মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যাওয়া খুবই দুঃখজনক।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, গতকালও তীব্র গরম ছিল, আজও তাই। গতকাল প্রায় ৫/৬ বার এই এলাকায় বিদ্যুৎ গেছে। ফলে এলাকাবাসী আরও বেশি কষ্ট পাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা হাসিব আহমেদ বলেন, আজ সকাল থেকে বেশ কয়েকবার আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ চলে গেছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে দীর্ঘ সময় ধরে আর আসে না। গরমে মানুষ এমনিতেই কষ্ট পাচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকা মানে চরম দুর্ভোগের বিষয়। ছোট সন্তান নিয়ে এ সময় ঘর থেকে বাইরে চলে যেতে হয়, ঘরে টেকাই যায় না।
এ বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, লোডশেডিং কোথাও নেই। বিদ্যুৎ না থাকার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে আজ একটি ট্রান্সফরমারের সমস্যা হয়েছিল, যে কারণে বনশ্রী এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। হতে পারে কোনো এলাকায় ট্রান্সফরমারের তার ছিঁড়ে গেছে বা ফিউজ চলে গেছে। তখন সেই নির্দিষ্ট এলাকায় বিদ্যুতের সাময়িক সমস্যা হতে পারে।
তিনি জানান, ঢাকা শহরে বিদ্যুতের নেটওয়ার্ক অনেক পুরনো। টান্সফরমার পুরনো, লাইন পুরনো। যে কারণে মাঝে মাঝে এমন সমস্যা হয়। তবে আমরা অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আগামীতে এগুলোর কাজ শেষ হলে অনেক সুবিধা ভোগ করবেন গ্রাহকরা। তখন এমন কোনো সমস্যা থাকবে না। তবে ট্রান্সফরমারের জন্য মাঝে মাঝে এমন হচ্ছে, লাইন ফল্টের জন্যও এমন হতে পারে। কোনো কোনো জায়গায় এমন সমস্যা হলে সেখানে কাজ করার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০/৪০ মিনিটের জন্য সাময়িক এমন সমস্যা হতে পারে।
বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট
করোনা সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং তীব্র গরমের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সংকটও। নিয়মিত পানি না পেয়ে উত্তেজিত এলাকাবাসী সম্প্রতি রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় ওয়াসার মডস জোন-৮ অফিস ঘেরাও করেন।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে প্রায় দেড় মাস আমরা পানি পাইনি। ওয়াসার গাড়ি থেকে বাসার মালিকরা নিয়মিত পানি কিনেছেন। সেই অল্প পানিতেই প্রতিটি মানুষকে চলতে হয়েছে। ঈদের পর পানির এ সংকট কিছুটা কমলেও প্রায়ই আমরা লাইনে পানি পাই না। বারবার ওয়াসার স্থানীয় অফিসে গিয়ে এলাকাবাসী অভিযোগ জানিয়েছে কিন্তু পরিপূর্ণ সমাধান পাইনি। তারা বারবার বলছে, অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির স্তর নেমে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
রাজধানীর বাড্ডা, শনির আখড়া, জিয়া সরণি রোড, পূর্ব জুরাইনসহ আশপাশের এলাকাতেও পানির সংকট রয়েছে। যে কারণে এলাকাবাসী খুবই ভোগান্তিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়াসার মডস জোন-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, বাড্ডা এলাকার পানির সমস্যা আমরা অনেকাংশেই ঠিক করে ফেলেছি। উত্তর বাড্ডা অংশে আমরা সমাধানের কাজ করে ফেলেছি। এখন আর সেখানে পানির সমস্যা নেই। তবে বাড্ডার দুই-একটি এলাকায় এখনো কিছুটা পানির সংকট রয়ে গেছে। আমরা এগুলো ঠিক করতে কাজ করে যাচ্ছি।
জানা গেছে, পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে ওয়াসার মডস জোনগুলোর কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১০টি অ্যাডভাইজরি ও মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
মডস জোনকেন্দ্রিক পানির সমস্যা সমাধান করতে গঠিত মোট ১০টি অ্যাডভাইজারি ও মনিটরিং টিমের কার্যক্রম আগামী ৩১ মে পর্যন্ত চলমান থাকবে।
জানা গেছে, গরম এলেই পানির লেয়ার নিচে নেমে যায়। যে কারণে অনেক এলাকায় পানির এমন সমস্যা হয়। এ অবস্থায় পাম্পে অতিরিক্ত পাইপ যুক্ত করতে পারলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে দাবি ওয়াসার। সে অনুযায়ী পাম্পগুলোতে অতিরিক্ত পাইপ যুক্ত করার কাজ চলমান রয়েছে।
এএসএস/এফআর/জেএস