উপসচিব পদে ৫০-৫০ কোটার সুপারিশ করল কমিশন
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) আওতায় একীভূত 'ক্যাডার' সার্ভিস বাতিল করে ১৩টি প্রধান সার্ভিসে বিভক্ত করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
কমিশন সূত্রে এসব আভাস পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাস্তবতার নিরিখে প্রশাসনিক সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় বর্তমানে উপসচিব পদের মধ্যে ৭৫ ভাগ এ সার্ভিসের জন্য সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা রাখা আছে। সব সার্ভিসের মেয়াদি সমতা বজায় রাখার স্বার্থে এবং জনপ্রশাসনের উচ্চতর পদে মেধাবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কমিশন প্রশাসনিক সার্ভিসের ৭৫ শতাংশ কোটা হ্রাস করে ৫০ শতাংশ করার বিষয়টি অধিকতর যৌক্তিক মনে করছে।
এতে বলা হয়, অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ পদ অন্যান্য সার্ভিসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টির আইনগত দিক পরীক্ষা করে দেখার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। উল্লেখ্য যে, কোনো কর্মকর্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও ৫০ শতাংশ কোটার কোনো একটি গ্রুপের পদ পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে কোনো গ্রুপের প্রার্থীকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সব সার্ভিস থেকে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সচিবালয়ের উপসচিব থেকে মধ্য অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে একটি 'সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস' (এসইএস) মেয়াদি গঠনের সুপারিশ করা হলো। সচিবালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলোতে বিভিন্ন সার্ভিস কর্মকর্তাদের নিয়োগ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। যেহেতু সিভিল সার্ভিস কাঠামো পিরামিডের মতো, সেহেতু শীর্ষ পদে সবার যাওয়ার সুযোগ রাখা যায় না।
আরও পড়ুন
মেধার ভিত্তিতে (মেরিটোক্রেসি) উচ্চতর পদগুলোতে আরোহণের সুযোগ দেওয়ার কথা যুক্তিসংগত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের বহু দেশেই এ নীতি অনুসরণ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলো নিয়ে সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস) গঠিত হতে পারে। সব সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভিত্তিতে এসইএসে নিয়োগ করা হলে একদিকে মেধার প্রাধান্য নিশ্চিত হবে; অপরদিকে আন্তঃসার্ভিস অসমতা দূর হবে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সম্ভাব্য কিছু সুপারিশের কথা জানিয়েছিলেন কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। সম্ভাব্য সুপারিশের মধ্যে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়টি ছিল। এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত না রেখে আলাদা কমিশনে রাখার সুপারিশ রাখা হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তারা।
অবশ্য এ নিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে মহড়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে প্রতিবাদ জানায় ক্যাডার কর্মকর্তারা।
এর আগে বুধবার দুপুর ১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনগুলো হস্তান্তর করেন।
এসএইচআর/এমজে