আজহারুল হত্যা
মসজিদের টাকা নয়ছয় করতেন ইমাম আব্দুর রহমান
র্যাবের হাতের গ্রেফতার ইমাম আব্দুর রহমান
পরকীয়ার জেরে গার্মেন্টসকর্মী আজহারুল হত্যাকাণ্ডের পর দক্ষিণ খানের সরদারবাড়ি মসজিদ এলাকায় কয়েকদিন ধরে আলোচনায় আছেন বয়োজ্যেষ্ঠ ইমাম আব্দুর রহমান। এতদিন মুখ না খুললেও ইমামের বিরুদ্ধে এখন চারিত্রিক অধঃপতনের পাশাপাশি আর্থিক নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা।
আজহারুল হত্যার পর সরদারবাড়ি এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইমাম আব্দুর রহমান নিজেকে প্রভাবশালী মনে করতেন এবং মানুষের সঙ্গে সবসময় দুর্ব্যবহার করতেন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক থাকায় এমন আচরণ করতেন তিনি। অনিয়ম দেখলেও অনেকে তার বিরুদ্ধে কথা বলতেন না। আজহারুলের স্ত্রীর সঙ্গে ইমামের পরকীয়ার বিষয়টি জেনেও অনেকে এ কারণেই চুপ ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
ধরা পড়ার পর ইমামের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি সরদার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিয়মিত মসজিদের টাকা আত্মসাৎ করতেন। সবশেষ ১০ বছরে তিনি মসজিদের লক্ষ লক্ষ টাকা সরিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
মসজিদের বর্তমান কমিটির কয়েকজন সদস্যে জানান, ইমাম হওয়ার পর থেকেই মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার পথ বেছে নেন তিনি। এলাকার অন্য যেকোনো মসজিদের তুলনায় সরদারবাড়ি মসজিদে টাকা পয়সা ও দান খয়রাত বেশি উঠত। এসব টাকা জমা রাখা ও খরচ করার দায়িত্বে ছিলেন ইমাম।
বিজ্ঞাপন
মসজিদের বর্তমান পরিচালনার কমিটির এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সারা বছরই বিভিন্ন উপলক্ষে মসজিদে দান খয়রাতের টাকা উঠত। এছাড়া মসজিদে যারা নিয়মিত নামাজ পড়তেন সেসব পরিবার থেকেও মাসিক একটা চাঁদা দেওয়া হতো। এসব টাকা ওঠার হিসাব দেখালেও খরচের কোনো সঠিক হিসাব দেখাতে পারতেন না ইমাম। মসজিদের কাজের কথা বলে মিথ্যা ভাউচার তৈরি করে দেখাতেন। এই টাকার ভাগ সরদার বাড়ির লোকজনের কাছেও যেত। তাই তারা ইমামকে সবসময় মানুষের অভিযোগ থেকে রক্ষা করতেন।’
এ বিষয়ে মসজিদের সাবেক সভাপতি মো. এরশাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ইমাম মানুষের সঙ্গে তেমন ভালো আচরণ করতেন না। সভাপতি থাকাকালে আমি তাকে বারবার বলতাম, আপনি একটি মসজিদের ইমাম, মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করুন। আমি সভাপতি থাকার সময় ইমাম সাহেব অনেক ভুয়া ভাউচার নিয়ে আসতেন। কয়েকবার ধরতে পেরে আমি সেগুলো ফেরৎ দিয়েছি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মসজিদ কমিটির বর্তমান সভাপতি দক্ষিণখান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবুল বাসার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি গত সাড়ে চার মাস আগে মসজিদের পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব নিই। এখন পর্যন্ত সেভাবে ইমামের এমন কার্যক্রম আমার চোখে পড়েনি। তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে সরদার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে মিলে ইমাম সাহেব মসজিদের উন্নয়নের জন্য টাকা পয়সা খরচ করেছেন। এ বিষয়ে কমিটি খুব বেশি কিছু জানত না।’
এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। ইমামের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় প্রাসঙ্গিকভাবে আসলে আমরা খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে কারা প্রশ্রয় দিয়েছে তা দেখা হবে।’
আজহারুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে বুধবার কুর্মিটোলা র্যাব সদরদফতরে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ‘চলতি বছরের শুরু থেকে আজহারুলের স্ত্রী আসমা আক্তার ও ইমাম আব্দুর রহমানের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের বিষয়ে আজহারুল জেনে যাওয়ায় তার স্ত্রী আসমা আক্তার ও ইমাম রোজার সাত দিন আগে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। গত ১৯ মে আজহারুলকে মসজিদে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন ইমাম। হত্যার পর আজহারুলের শরীর ৭ টুকরো করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন তিনি। পরে মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ দেখে র্যাবকে খবর দেন স্থানীয়রা। এরপর ইমামকে আটক করে র্যাব। তার দেওয়া তথ্যমতে পুলিশ সেপটিক ট্যাংক থেকে আজহারুলের মরদেহ উদ্ধার করে।
এমএসি/এফআর/জেএস