নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করলেন মুছার স্ত্রী পান্না
নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার। আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করলেন। মঙ্গলবার (১ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় জিডিটি করেন তিনি।
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কি। তিনি বলেন, পান্না আক্তার সোমবার আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। তিনি ধারণা করছেন অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তার ক্ষতি করতে পারেন। এ কারণে নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন।
বিজ্ঞাপন
জিডির বিষয়ে পান্না আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য থানায় জিডি করেছি। তিনি বলেন, মিতু হত্যা মামলায় আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর থেকে নিজের মধ্যে ভয় কাজ করছে। কেউ হুমকি দিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ হুমকি দেয়নি। পুলিশ থেকে বলা হয়েছে সবসময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে।
এর আগে সোমবার (৩১ মে) চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মোহাম্মদ রেজার আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
সাক্ষ্য দেওয়া পান্না আক্তার মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মুছার স্ত্রী। ঘটনার পর থেকে মুসাকে খুঁজে পাচ্ছে না পরিবার। মুছা বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
পান্না আক্তারের সাক্ষীর বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতে পান্না আক্তার জবানবন্দি দিয়েছেন। পান্না আক্তার জবানবন্দিতে কী বলেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পান্না আক্তার বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মিডিয়াতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, জবানবন্দিতেও সে কথা বলেছেন। আমি এখনও কাগজ পাইনি, কাগজ হাতে পেলে বিস্তারিত বলতে পারব।
১৩ মে রাতে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, নিজের কথা ভেবে, স্বামীর ফিরে আসা এবং সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভয়ে এতদিন চুপ থেকেছি। মুখ খুলিনি। কিন্তু এতদিনেও স্বামীকে ফিরে পাইনি। আজ যেহেতু সুযোগ এসেছে। আমি ভীত-সন্ত্রস্ত, আতঙ্কে আছি। তবুও জানতে চাই, আমার মুছা কোথায়?
মিতু হত্যায় মুছার জড়িত থাকার বিষয়টি আপনি বিশ্বাস করেন কি না— জানতে চাইলে পান্না আক্তার বলেন, ‘প্রথমে তো আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু ঘটনার পর অনেক বেশি উদ্বিগ্ন ছিল মুছা। কয়েকবার বাবুল আক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখেছি। দু-একদিন পরই টের পেয়েছিলাম মুসা কোনো না কোনোভাবে মিতু হত্যায় জড়িত। আমি জানতে চেয়েছিলাম মুছার কাছে। ও বলেছিল, আমি করিনি, করাইছি। এছাড়া কোনো পথ ছিল না। নইলে আমার নিজেরই ক্ষতি হয়ে যেত।’
পান্না আক্তার বলেন, মিতু ভাবি দুই সন্তানের মা। আমিও দুই সন্তানের মা। আমি বুঝি বাবা-মা হারা সন্তানদের কী কষ্ট। আমিও প্রতিনিয়ত কষ্ট করছি। মিতু ভাবিকে খুন করতে হবে— এমন কোনো শত্রুতা বা কারণ ছিল না। এরপরও ওই হত্যায় বাবুল আক্তারের চাপে জড়িয়ে পড়েছিল মুছা। বাবুল আক্তারের পূর্বপরিচিত ও সোর্স হিসেবে কাজ করেছে সে।
তিনি বলেন, মিতু হত্যায় নতুন মামলা হয়েছে। বাবুল আক্তারের সংশ্লিষ্টতার কথা শোনা যাচ্ছে। এখন তো আমাকে কথা বলতেই হবে। বাবুল আক্তারের জন্যই আজ আমার স্বামী অভিযুক্ত ও নিখোঁজ। নতুন হত্যা মামলার তদন্তের স্বার্থেই মুছাকে খুঁজে বের করা জরুরি।
‘স্ত্রী মিতুকে হত্যায় মুছাকে ব্যবহার করেছে সাবেক এসপি বাবুল আক্তার। এজন্য কোনো কিছু হবে না মর্মে ‘শেল্টার’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন বাবুল আক্তার’— বলেন মুছার স্ত্রী।
এর আগে আদালতে তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন। তখন তিনি বাবুল আক্তারের নির্দেশে মুছাকে তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধে হত্যায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১১ মে ডেকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। বর্তমানে তিনি ফেনী কারাগারে আছেন।
কেএম/এসএসএইচ