সহকর্মীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকার আংশিক ফেরত দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মচারী মো. ফজলুল হক চৌধুরী। সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে এ লেনদেন হয়। এরপর ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য সহকারী সুরেশ চন্দ্র দাশ অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।

সুরেশ চন্দ্র দাশের অভিযোগ, ফজলুল হক তার কাছ থেকে সিভিল সার্জনের নাম ব্যবহার করে মোট ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সোমবার তিনি ২৫ হাজার টাকা ফেরত পেলেও বাকি ২০ হাজার টাকার বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাননি। এরপরও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন।

এর আগে ‘সিভিল সার্জনের নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ কর্মচারীর বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ২৮ এপ্রিল ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হয়।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ আসে। পরে সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম উভয় পক্ষকে ডেকে ঘটনাটি শুনে প্রমাণাদি দেখতে চান। পরে তিনি অভিযুক্ত ফজলুল হককে অর্থ ফেরত দিতে নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগী সুরেশ চন্দ্র দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিউজ হওয়ার পর সিভিল সার্জন স্যারের রুমে আমাকে ডাকা হয়। এসময় আমি যাবতীয় প্রমাণ দেখাই। আমাকে মোট ২৫ হাজার টাকা দেয় এবং একটি সাদা কাগজে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য সই নেওয়া হয়। তবে আমার কাছ থেকে ফজলুল সিভিল সার্জন স্যারের নামে মোট ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। আমি বাকি টাকা ফেরত চাই। কখন দেবে এখনও আশ্বাস দেয়নি। তাছাড়া ফজলুল আমাদের আরেক সহকর্মীর কাছ থেকে ৬০ হাজার নিয়েছে এগুলো ফেরত দেয়নি।

মো. ফজলুল হক চৌধুরী। ছবি- সংগৃহীত

এর আগে সুরেশ চন্দ্র দাশ লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, তাকে সীতাকুণ্ড থেকে ফটিকছড়িতে বদলি করা হলে তিনি পরিবার-পরিজনের কথা বিবেচনায় বদলি বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। এ সুযোগে চট্টগ্রাম জেলার স্বাস্থ্য সহকারী অ্যাসোশিয়নের সভাপতি মো. ফজলুল হক নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে দাবি করে বদলি আদেশ বাতিল করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে চার দফায় বিকাশের মাধ্যমে ৪৫ হাজার টাকা নেন। একইভাবে সীতাকুণ্ডের আরেক স্বাস্থ্য সহকারী কাজী মো. আরিফ উদ্দিনের কাছ থেকেও ৬০ হাজার টাকা আদায় করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বদলি আদেশ বাতিল করতে পারেননি এবং টাকা ফেরতও দেননি।

সুরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, ফজলুল হক একসময় নিজেকে ড. হাছান মাহমুদের ঘনিষ্ঠ নেতা পরিচয় দিতেন। সেই পরিচয়ে সহকর্মীদের শাসাতেন। এখন আবার নিজেকে বিএনপির লোক পরিচয় দিয়ে সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন। ফজলুল হক নিয়মিত অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। হাজিরা খাতায় লাল কালিতে অনুপস্থিত লেখা থাকলেও প্রশাসন নির্বিকার।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাস্থ্য সহকারী ফজলুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ এপ্রিল ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ারকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত সোমবার ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত দুজনকে ডেকেছি। তারা সমঝোতা করে ফেলেছে। 

টাকা লেনদেনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা কীভাবে সমঝোতা করেছে তা বলতে পারবো না। তবে ভুক্তভোগী অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। 

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য সহকারী মো. ফজলুল হক চৌধুরীকে কল করা হলে প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম দিদার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি অফিসে- বিশেষ করে একজন সিভিল সার্জনের উপস্থিতিতে এমন লেনদেন এক প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি। এতে অন্য অভিযুক্তরাও ভবিষ্যতে এমন সমঝোতার আশ্রয় নিতে উৎসাহিত হবে। উচিৎ ছিল- অভিযুক্ত কর্মচারীকে দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে সোপর্দ করা। 

এমআর/এমএসএ