আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে বেশি চাহিদা করবো আর প্রকৃতিকে ধ্বংস করবো এটা হতে পারে না। সেজন্য প্রকৃতি ব্যবহারে আমাদের সংযমী ও মিতব্যয়ী হতে হবে। বায়ু ও শব্দদূষণের ফলে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। গত ৩০ বছরে প্রায় ৩৫টি নতুন রোগের সৃষ্টি হয়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর নির্দয় হওয়ার কারণে।

প্রকৃতির সঠিক ব্যবহার না করলে প্রকৃতি আমাদের উপর প্রতিশোধ নেবে এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতি যদি ঠিক না থাকে তবে প্রাণীজগৎ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রকৃতি মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তা সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদেরই।

শনিবার (৫ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের যৌথ আয়োজিত ‘শহরের বাস্তুসংস্থানের উপর বায়ু এবং শব্দ দূষণের প্রভাব’ শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এ সব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতিকে ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এখনই তা বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদফতর কাজ করছে। শব্দ ও বায়ুদূষণ বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে মানুষের মাঝে গণসচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদফতর বিআরটিসি, বিআরটিএ এবং দেশের সব সিটি করপোরেশনকে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে শব্দ ও বায়ুদূষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত কারার অনুরোধ জানাচ্ছি।

বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, প্রকৃতি সবকিছু উজাড় করে আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে অথচ আমরা প্রকৃতিকে নষ্ট করে দিচ্ছি। জনস্বাস্থ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো প্রকল্প যেন সামনে না এগিয়ে যায়, সে জন্য সময়মতো পরিবেশগত ছাড়পত্র/অনুমতি প্রদান কিংবা না প্রদানের সিদ্ধান্ত দৃঢ়তার সঙ্গে গ্রহণ করার জন্য পরিবেশ অধিদফতর এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রকৃতি যদি ঠিক না থাকে, তবে প্রাণীজগতও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রকৃতি মানুষের জীবনের একটি অংশ, তা সংরক্ষণের দায়িত্বও আমাদের।

স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, কোভিড ১৯ এর কারণে প্রকৃতির রি-ইস্টোরেশন হয়েছে। বায়ু ও শব্দ দূষণ শুধুমাত্র বর্তমানে রাজধানী ও শহর অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়, অনেকক্ষেত্রে দূষণ ছোট ছোট জেলা শহরসহ, উপজেলা ও পৌরসভা অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করেছে। বড় বড় শহরগুলোয় বায়ু দূষণের মাত্রা বাংলাদেশ জাতীয় আদর্শ বায়ু মানমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ৩ থেকে ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীর কোনো এলাকায় দিনে শব্দ দূষণের মাত্রা জাতীয় আদর্শ মানমাত্রার মধ্যে পাওয়া যায়নি। মানুষের স্বাস্থ্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানকে রক্ষা ও সমুন্নত রাখার জন্য বায়ু ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।

আলোচনায় আরও যুক্ত ছিলেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাবেক পরিচালক ডা. এ. এম. জাকির হোসেন, ওয়ান হেলথ মুভমেন্ট বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়ক ড. নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক উপদেষ্টা ড. গুলশান আরা লতিফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি