আনোয়ার হোসেন সিকদার হত্যার ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার

‎রাজধানীর দিয়াবাড়ি মেট্রো গোলচত্বর এলাকার রাইদা বাস ডিপোর মালিক আনোয়ার হোসেন সিকদার (৫৩)। রাইদা বাসের চালক আসাদুলের কাছে ১৮ লাখ টাকায় কিস্তিতে একটি বাস বিক্রি করেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় বিরোধ।

১২ লাখ টাকা দিলেও গত ১৭ জানুয়ারির মধ্যে বাকি টাকা না দিতে পারলে বাস ও টাকা পাবেন না বলে জানিয়ে দেন আনোয়ার। ওই বক্তব্যের পর ওই দিনই সন্ধ্যায় নিজ ডিপোতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। হত্যার পর তার মরদেহ পুঁতে রাখা হয়।

পরদিন নিহতের পরিবার থানায় নিখোঁজের জিডি করেন। সেই জিডির সূত্র ধরে ঘটনার চার মাস পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে তুরাগ থানা পুলিশ। গতকাল রোববার ঢাকার আশুলিয়া ও দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

‎গ্রেপ্তাররা হলেন- সবুজ ফকির (২৮), কালাম (২২) ও মো. শাকিল (১৮)। গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে।

‎সোমবার (২৫ মে) দুপুরে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মুুহিদুল ইসলাম।

‎ডিসি বলেন, হত্যার মূল পরিক্লপনাকারী আসাদুল ও সবুজ। আসাদুলের কাছে ১৮ লাখ টাকায় কিস্তিতে একটি বাস বিক্রি করেন। ১২ লাখ টাকা দিলেও গত ১৭ জানুয়ারির মধ্যে বাকি টাকা না দিতে পারলে বাস ও টাকা পাবেন না বলে জানিয়ে দেন।

সবুজ ২ লাখ টাকা সুদে ধার নেন আনোয়ারের কাছ থেকে। ধার নেওয়ার বেশি পরিমাণ টাকা সুদ দিলেও সেই টাকা আর শেষ হয় না। পরে তারা আনোয়ারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

রাইদা বাসের চালক ও হেল্পারদের নিয়ে গত ১৭ জানুয়ারি সকালে রাইদা বাস ক্রয়-বিক্রয়ের লেনদেন সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তারা ও তাদের কয়েকজন সহযোগী মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আনোয়ার হোসেন সিকদারকে রাইদা বাস ডিপোর ভেতরে হত্যা করেন।

তারা প্রথমে আনোয়ারের মাথায় লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করে এবং পরে গলায় ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। হত্যার পর তারা লাশ গুম ও প্রমাণ নষ্ট করার জন্য নিহত আনোয়ারের মরদেহ বাস ডিপোর উত্তর পাশে টিনের বেড়ার কাছে মাটির নিচে পুঁতে রাখে।

‎ঘটনার বিষয়ে ডিসি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি সকালে দিয়াবাড়ি মেট্রো গোলচত্বর এলাকায় রাইদা বাস ডিপোর মালিক আনোয়ার হোসেন বাসা থেকে রাইদা ডিপোর উদ্দেশে বের হন। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি বাসায় ফিরে না আসায় এবং ফোন রিসিভ না করায় তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু তাকে কোথাও না পেয়ে পরদিন ১৮ জানুয়ারি তুরাগ থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন আনোয়ারের স্ত্রী শিউলি আক্তার।

ওই জিডির সূত্র ধরে তথ্য পাওয়া যায়, ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে বিরোধের জেরে আনোয়ারকে হত্যা করা হয়েছে। পরে হত্যায় জড়িত কালাম ও শাকিলকে আশুলিয়া এলাকা থেকে গতকাল রোববার গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সবুজ নামের আরেকজনকে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

‎মুহিদুল বলেন, গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুরাগ থানা পুলিশ দিয়াবাড়ী মেট্রো গোলচত্বরের ডেসকো অফিসের পূর্ব পাশে রাইদা ডিপোর ভেতরের উত্তর পাশের টিনের বেড়া সংলগ্ন মাটির নিচ থেকে আনোয়ারের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় ভিকটিম আনোয়ারের স্ত্রী শিউলি আক্তার বাদী হয়ে গ্রেপ্তারসহ আরও ৫-৬ জনের বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় গত রোববার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

‎হত্যাকাণ্ডে জড়িত পলাতক অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ডিসি মুহিদুল।

জেইউ/এমএ