প্রতারক ওমর ফারুক

স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাশের পর ২০১৪ সালে ঢাকায় আসেন নোয়াখালীর কবিরহাটের ওমর ফারুক (৩২)। পরে মগবাজার এলাকায় একটি বিকাশের দোকানে চাকরি শুরু করেন। ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদ নগর এলাকায় নিজেই খুলে বসেন বিকাশ লেনদেনের দোকান। আর সেখানে বসেই পরিকল্পনা করেন ভয়ংকর প্রতারণার।

প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে ৫টির বেশি একাউন্ট চালু করেন। ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ৬০ ফিট এলাকার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স নামে এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিলের টাকা।

তিতাসের বিল আত্মসাৎকারী ও জালিয়াতির মূলহোতা ফারুককে রোববার (৬ জুন) রাতে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব বলছে, ২০১৮ সাল থেকে তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ করে জমা না দিয়ে বিলের টাকা আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ওমর ফারুক। এ সময় তিতাস বিল না পাওয়া ও ভয়ঙ্কর প্রতারণার বিষয়ে খোঁজই রাখেনি।

সোমবার (৭ জুন) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।

মোজাম্মেল হক বলেন, রাজধানীর মিরপুরের তিনটি ওয়ার্ডের দেড় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে দুই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস বিল নিয়েছিলেন ওমর ফারুক। গ্যাস বিল ছাড়াও বিদ্যুৎ ও পানির বিলও নিয়েছিল ফারুকের এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স। গ্রাহকরা পানি বিদ্যুৎ বিল জমা দিলেও দেড় বছরের গ্যাস বিল জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে ওমর ফারুক। এ সময় খোঁজও নেয়নি তিতাস কর্তৃপক্ষ।

অনেকটা নীরবেই ওমর ফারুক গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যান। এর দেড় বছর পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে মিরপুর এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে জানায় তারা বিল পায়নি দেড় বছর। সেই বকেয়া বিলের জন্য প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রচারণা চালায়। মাইকিংয়ের পরপরই ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারক ফারুকের ও তার প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়েন। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এরপর গ্রাহকদের মাঝে জানাজানি হলে গত ২৩ জানুয়ারি ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সসহ তিনটি অফিস তালা দিয়ে তার অন্যান্য সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যায়।

এ বিষয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী মিরপুর মডেল থানায় গত ২ ফেব্রুয়ারি ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর র‍্যাব-৪ গোয়েন্দা দল ওই মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জালিয়াতির রাজা প্রতারক ফারুকের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করে।

ওমর ফারুকের উত্থান

ওমর ফারুক নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার সাগরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থানীয় একটি স্কুল থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করে ২০১৪ সালে ঢাকায় চলে এসে মগবাজার এলাকায় একটি বিকাশের দোকানে চাকরি শুরু করে। ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদ নগর এলাকায় নিজে বিকাশের ব্যবসা শুরু করে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫টির বেশি একাউন্ট খোলেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ইন্টার্ণ ব্যাংকিং এন্ড কমার্স নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। ফারুকের এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রাহকদের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিলের টাকাও সংগ্রহ করতে থাকেন। গত ২০১৮ সাল থেকে তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল নিয়ে জমা না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, তার এ প্রতারণায় তিতাসের কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ জড়িত থাকে তাহলে আমরা তিতাস কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানিয়ে দেবো। প্রতারিত সবাই মামলা করলে তারা ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জেইউ/এমএইচএস/জেএস