খাদ্য গ্রহণ ছাড়া কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। তবে সে খাবার অবশ্যই হতে হবে বিশুদ্ধ। দূষিত বা ভেজাল মিশ্রিত খাদ্য মানুষের জন্য স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শিশুসহ তরুণ প্রজন্মকে ক্ষতিকর খাবার থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (৭ জুন) বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনা সভায় এ দাবি উত্থাপন করেন বক্তারা।

আলোচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতিবছর মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। আগ্রাসী প্রচারণার প্রভাবে শিশুরা চিনি নির্ভর ক্ষতিকর পানীয় বা চিপসের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যা আগামী প্রজন্মকে অসুস্থ করে তুলছে। ফাস্ট ফুড-জাংক ফুড ও চিনি নির্ভর ক্ষতিকর পানীয় সেবনে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপের মতো ভয়াবহ মরণব্যাধির হার ক্রমশ বাড়ছে। শিশুদের মধ্যেও ক্যান্সার, হৃদরোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, মানবদেহে শক্তি সঞ্চার করা, ক্ষয়পূরণ ও রোগ প্রতিরোধে খাদ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের দেশে বর্তমানে একটি বড় সমস্যা হলো খাদ্যে ভেজাল। আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব খাদ্যেই ভেজাল মেশানো হয়। বাদ যাচ্ছে না মৌসুমি ফল, শাকসবজি, মাছ-মাংসও। ফলে ভেজাল খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষাক্ত খাবার গ্রহণের ফলে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন জটিল ও মরণব্যাধি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। টেকসই জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ নায় বরং দেহে রোগের বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ক্যান্সারসহ এমন দুই শতাধিক রোগের জন্য দায়ী অনিরাপদ খাদ্য। অস্বাস্থ্যকর ক্ষতিকর খাবারের আগ্রাসী প্রচারণার ফলে বাঙালির নিজস্ব আহার সংস্কৃতি বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিজ্ঞাপন শিশুদের মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। অস্বাস্থ্যকর খাবারের যেসব বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়, এগুলো ভুল বার্তা দেয়। জনস্বার্থে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনগুলো অবশ্যই বন্ধ হওয়া জরুরি।

তারা আরও বলেন, খাদ্যে ভেজাল বিষয়টি সরকারকে রাষ্ট্রের প্রথম এবং প্রধান এজেন্ডা হিসাবে নিয়ে এ বিষয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। দেশের জনগণই যদি সুস্থ না থাকে তাহলে আমাদের সমাজচিন্তা, রাজনীতি, স্বাধীনতা সবই বিফলে যাবে।

পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদের সভাপতিত্বে আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জি.এম রোস্তম খান, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সহসভাপতি, মো. সেলিম, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান, ফ্যাট টু ফিট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আফজাল পারভেজ রাজ, নিরাপদ চিকিৎসা চাই'য়ের (নিচিচা) মহাসচিব উম্মে সালমা, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের (বানিপা) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি