ভারতে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব

বঙ্গীয় অঞ্চলের বদ্বীপে আঘাতের মাধ্যমে প্রকৃতির অদম্য শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ভারতের মূল ভূখণ্ড সরাসরি ইয়াসের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা এর মূল ব্যাসার্ধের মধ্যেই ছিল। হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশেও। ঝড়ে মারা গেছেন দুইজন, ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তা ও অবকাঠামোর।

বাংলাদেশ ও ভারতের উচিত এই ধরনের জটিলতা নিরসনের জন্য সহযোগী এবং টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মঙ্গলবার (৮ জুন) ভারতীয় হাই কমিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে। এতে ২০ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল অনেক ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। পাশাপাশি চরপ্রধান বরিশাল বিভাগ, বিশেষ করে ভোলা এবং পটুয়াখালী জেলা, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হয়েছিল। সেখানে তিনটি সেতু এবং তিনটি কালভার্টসহ ৭২৭.৮১ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তার ক্ষতি হয়। ধ্বংসযজ্ঞের কারণে খুলনা ও সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ বিপর্যয় সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

২০১৭ সালে ভারত প্রথম বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বহুমাত্রিক প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা (বিমসটেক) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের আয়োজন করে। ভারতীয় হাইকমিশন মনে করছে, ঘূর্ণিঝড়ের পৌনঃপুনিকতা বিবেচনা করে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই ধরনের উদ্যোগের আওতায় তাদের পরিবেশ ও জলবায়ু কূটনীতি পুনরায় নিশ্চিত করা উচিত। বিমসটেক অঞ্চলটি বৈশ্বিক জনসংখ্যার শতকরা ২২ ভাগ নিয়ে গঠিত এবং তা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে রয়েছে।

পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের উচিত দুর্যোগের প্রস্তুতি, প্রতিরোধ, প্রশমন ও ঝুঁকি হ্রাস এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে একটি যৌথ, ক্রিয়াশীল, সামগ্রিক নীতি নিয়ে কাজ করা। উভয় দেশকে যৌথভাবে একটি বিস্তৃত ঝুঁকি হ্রাস কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রশাসনের সব স্তরের অংশীদারিত্বকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে তাদের একটি অভিন্ন পরিণতির দিকে যাওয়া উচিত।

এতে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা টাস্কফোর্স গঠন করা। এটি হুমকিগুলো একযোগে অনুধাবন করতে, জরুরি ব্যবস্থাপনার জন্য মানদণ্ড তৈরি করতে এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করতে পারে। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়েরই পর্যাপ্ত আবহাওয়া বিভাগ রয়েছে, যেগুলো এই জাতীয় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের উৎপত্তি, গতিপথ এবং সমাপ্তির পূর্বাভাস দিতে সক্ষম।

এছাড়া সুন্দরবনকে পুনরুজ্জীবিত করতে সংরক্ষণ প্রকল্প এবং পরিবেশ সুরক্ষা গোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের প্রয়োজন, যা বিভিন্ন দিক থেকে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরক্ষা দিতে পারে বলে হাইকমিশন থেকে বলা হয়।

এনআই/এমএইচএস