কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের কাজ করছিলেন সহস্রাধিক মানুষ। মঙ্গলবার (১ জুন) বেলা ১১টার দিকে নদীতে ট্রলারযোগে বাঁধ বাধার কাজ পরিদর্শনে এগিয়ে আসছিলেন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান।

কিছুটা এগিয়ে আসতেই হঠাৎ করে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা মানুষ কাদা-মাটি ছুড়তে থাকেন। জনরোষে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় এমপির ট্রলার। পরে অবশ্য ফিরে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২৬ মে ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দশহালিয়া গ্রামে বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের লোনাপানিতে। এখনও ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার পানি আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে।

গত তিনদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন এলাকার মানুষ। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এমপি একটি ট্রলারে করে ওই ভাঙা বাঁধের স্থানে যান। যখনই তার ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তে যায়, তখনই কাদা ছুড়তে শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষগ। বারবার মাইকে ঘোষণা করেও তাদের নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাদা ছুড়ে মারার একপর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে।

প্রায় আধাঘণ্টা পর কাজ করতে থাকা মানুষকে শান্ত করা হলে আবার এমপি সেই ভাঙা বাঁধের কাছে যান। এ সময় এমপি মাইকে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু সেটিও পছন্দ হয়নি কাজ করতে থাকা মানুষের। এমপি কাজে নামার পর অধিকাংশ মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান দাবি করেছেন, তাকে বহনকারী ট্রলারে কাদা ছুড়ে মারা হয়নি। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষ চান টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর ভাঙনে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভাঙন এলাকায় কাজ করছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে গেলে তাকে দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তাদের ওই দাবি যৌক্তিক।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে যাওয়া দেওরা গ্রামের বাবুল নামের সাবেক মেম্বার বলেন, এমপি আসায় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে এমপি বক্তব্য দেন এবং সবার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। এ সময় সাধারণ জনগণ কাজ ছেড়ে চলে আসেন।

ট্রলারে কাদা ছোড়ার দৃশ্য ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাঁধের কাছে ট্রলার ভিড়ছিল। এমন সময় সাংসদের ট্রলারকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো কাদা ছোড়া হচ্ছে। টিকতে না পেরে পিছু হটছে ট্রলার। মাইকে উত্তেজিত মানুষকে শান্ত হওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন একজন। সাংসদের ট্রলার ফিরে যেতে দেখে হাততালি দেওয়ার শব্দও শোনা যায় ভিডিওতে।

এদিকে ভাঙা বাঁধের কাছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করছিলেন কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, মহারাজপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম আবদুল্লাহ আল মামুনসহ অনেকেই।
   
কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমপি ট্রলার থেকে নামবে, সেই সময় কিছু মানুষ পরিকল্পিতভাবে ট্রলারে কাদা ছুড়ে মারে। পরে তিনি নেমে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ করছিলেন। এমন সময় ট্রলারে এমপি এসছেন শুনেই সাধারণ মানুষ একজায়গায় হয়ে নদীর ধারে ছুটে যান। এ সময় তারা উত্তেজিত হয়ে ট্রলারে কাদা ছুড়ে মারতে থাকেন। এতে এমপির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাঁদা লাগে।

কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, কয়রার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম সেটি মানুষ এমপিকে দেখাল। এমপি তখন নদীতে। উল্লেখযোগ্যভাবে মাটি ছুড়েছে তেমনটা নয়। মানুষের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ বিরাজ করছে।

মোহাম্মদ মিলন/এমএসআর