প্রতিমাসেই বিল পরিশোধ করে গেছেন রাজধানীর মিরপুর-২ বারেক মোল্লার দেড় হাজারের বেশি এলাকাবাসী। কিন্তু প্রতারক ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স প্রতিষ্ঠানটি ডেসকোর তিন মাসের টাকা বকেয়া রেখে সব টাকা পরিশোধ করলেও তিতাস গ্যাস ও ওয়াসার কোনো বিলই জমা দেয়নি। যে কারণে ১২ মাস থেকে ২৬ মাস পর্যন্ত বিল বকেয়া পড়েছে অনেকের। এ কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ওয়াসা, ডেসকো ও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিতাস ও ওয়াসার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন তারা। নাহলে যে দিন ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা ওমর ফারুক অফিসে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়, তার পরদিনই কেন গ্যাস-পানির লাইন কাটতে এসেছিল তিতাস ও ওয়াসা।

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল আত্মসাতকারী চক্রের হোতা ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের প্রতিষ্ঠাতা মো. ওমর ফারুককে (৩৬) গ্রেফতারের পর জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (৮ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বারেক মোল্লার মোড়ে মানববন্ধনে ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা ইতি জানান, দুই বছর ধরে ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের মাধ্যমে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসছি। এবছর যখন হঠাৎ করে প্রথমে ডেসকোর লোকজন বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করতে আসে, তখন আমরা বলি- প্রতিমাসে টাকা দিয়েছি কিন্তু তারা বিশ্বাস করে না। কাগজ দেখাই তবু বিশ্বাস করে না, তারা লাইন কেটে চলে যায়। এরপর তিতাসের লোকজনও আসে গ্যাসের লাইন বিচ্ছিন্ন করতে।

তিনি বলেন, আমরা পরদিন ডেসকো অফিসে যাই। দেখি আমাদের মতো আরও অনেক ভুক্তভোগী সেখানে। একই অবস্থা গ্যাস অফিসেও। এরপর বারেক মোল্লার মোড়ে ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের অফিসে এসে দেখি তালাবদ্ধ। যোগাযোগের নাম্বারও বন্ধ। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, সন্দেহ- এখানে কোনো গোলমাল, যোগসাজশের ব্যাপার আছে। আমার এক লাখ ২০ হাজার টাকা বকেয়া। অথচ তিতাস দুই বছর খোঁজ নিতে আসেনি। ডেসকো তিন মাস বকেয়ার খোঁজ নিতে আসেনি। যেদিন ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের মূলহোতা ওমর ফারুক পালিয়েছে, তার পরদিনই সবাই লাইন কাটতে এসেছে, পুলিশ তাকে খুঁজতে এসেছে। এটা খুব সন্দেহজনক। একজন মানুষ কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে চলে যাবে, এটা সম্ভব না। তিতাস, ডেসকো ও ওয়াসার লোকজন জড়িত থাকতে পারে, এর তদন্তের দাবি জানান তিনি।

৪২/১ আহম্মেদ নগরের বাড়ির মালিক মো. মনির আহম্মেদ বলেন, লাখ টাকার বিল তো আমি পরিশোধ করেছি। এই বিল কেন আমি আবার দেব। বিল প্রতারণা হয়েছে। প্রতারক গ্রেফতারও হয়েছে। আমাদের এখন অনুরোধ- এ বিল মওকুফ করেন, নয়ত টাকা উদ্ধার করে দেওয়া হোক।

মাওলানা মো. সামসুদ্দিন নামে ভুক্তভোগী এক বাসিন্দা বলেন, করোনার কারণে সব সময় ব্যাংকে যেতে পারিনি। তাই ব্যাংকের মাধ্যমে বিল পরিশোধও করতে পারিনি। জানতে পারি অনেকেই ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সের মাধ্যমে সব বিল পরিশোধ করছে। আমিও তারপর থেকে বিল দিয়ে আসছি প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে।

তিনি বলেন, তিন মাস ওয়াসার বিল বকেয়া থাকলে নোটিশ আসে। সাত দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে। অথচ ছয় মাস ওয়াসার খবর ছিল না। সব বিল মিলিয়ে ৯০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। যেটা কি না এখন পুরোটাই বকেয়া শোধ করতে হবে।

কামরুল ইসলাম নামে আরেকজন বাসিন্দা বলেন, আমার ৫৫ হাজার টাকার বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল বকেয়া দেখানো হয়েছে, যা আমি নিয়মিত পরিশোধ করেছি। এই প্রতারণা দিবালোকের মতো সত্য যে- কারো না কারো যোগসাজশ ছিল।

এমএস দলিল উদ্দিন ট্রেডার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম হৃদয় বলেন, দেড় হাজারের বেশি মানুষ প্রতারিত হয়েছেন। ১০ কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই টাকা প্রতারক ওমর ফারুক আত্মসাৎ করেছে। সে কিন্তু সব টাকা আত্মসাৎ করেনি। কিছু কিছু বিল সে পরিশোধও করেছে। সেসময় যদি ওয়াসা, ডেসকো কিংবা তিতাস আমাদের জানাত এমন অনিয়মিত বিল পরিশোধ কিংবা প্রতারণা হচ্ছে, তাহলে আজ এ মানববন্ধন করতে হতো না। 

তিনি বলেন, আমরা সকল প্রকার বিলের টাকা ফেরত চাই। ইন্টার্ণ ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্সকে এলাকাবাসীর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিলের জমাকৃত টাকা ফেরত দিতে হবে।

জেইউ/এসএসএইচ