জেন্ডার বাজেট প্রণয়ন থেকে সরকারের সরে আসা দুঃখজনক। সরকার কেন সরে আসলো তাও পরিষ্কার নয়। যদিও করোনাকালে নারীর প্রতি অভিঘাত বেড়েছে। অথচ জেন্ডার বাজেটের লক্ষ্য থেকে আমরা এখনও দূরে। কোভিড মোকাবিলায় জেন্ডার ইস্যুকে গুরুত্ব দিতে হবে, নারীর নেতৃত্বকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ‘বাজেট পরবর্তী’ অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। বুধবার (৯ জুন) সকাল ১১টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ‘বাজেট পরবর্তী’ সংবাদ সম্মেলন অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন না দেওয়ায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মসূচিতে নারীর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের নীতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, ২০২০ এ কোভিড পরিস্থিতির পর আর জেন্ডার বাজেট প্রকাশিত হয়নি। এ বছরেও প্রণয়ন করা হবে ভাবা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণে নারীর জন্য প্রকল্পগুলো থেকে কী সুবিধা পাওয়া যাবে এটা এখন আর জানা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি প্রস্তাবিত বাজেটের চূড়ান্ত প্রকাশের সময় জেন্ডার বাজেট প্রকাশের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, বাজেটে থাকা বরাদ্দ যাতে নারীর অধিকতর কল্যাণের জন্য ব্যয় হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জন্য থাকা বরাদ্দ এবার কমেছে।

তিনি বলেন, যেটুকু বরাদ্দ হচ্ছে তা ঠিকমত খরচ হচ্ছে কি না, এডলসেন্ট ফ্রেন্ডলি কর্নারে যে সেবা দেওয়ার কথা তা হচ্ছে কি না, কী কী স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে এর গুণগতমান যাচাই করতে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। স্টিমুলাস প্যাকেজে গত বছর ৫ শতাংশ নারীদের দেওয়া কথা বলা হলেও এর বেশি দিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য গত বছর ৬৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও তার সবটুকু খরচ হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ই-কমার্স, মোবাইল ব্যাংকিং ভিত্তিক সেবার ওপর কর আরোপ করায় নারী উদ্যোক্তা যারা ঘরে বসে কাজ করছেন তাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জেন্ডার বাজেট কার্যকর করতে পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে জেন্ডার সংবেদনশীল কাঠামো তৈরি, জেন্ডার ডিসএগ্রিগেটেড ডাটা সংগ্রহের প্রতি জোর দিতে হবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, জেন্ডার বাজেট বই বের না হলেও নারীর জীবনযাপনের কল্যাণে, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে, গৃহীত প্রকল্পের অগ্রগতির মূল্যায়নের একটা সংক্ষিপ্ত খতিয়ান প্রকাশ করতে হবে।

সভায় বক্তারা আরও বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমানো হলেও প্রান্তিক নারীর জন্য সাবসিডি দিতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে। দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় গুণগত মান যাচাই করতে হবে, যাতে সব শ্রেণির নারীরা সহায়তা পায়, পুঁজির সহায়তা দিতে হবে, ট্রেনিং দিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে যারা সহায়তা করছেন সেসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে হবে।

তিনি বলেন, হিজড়া কমিউনিটির জন্য স্কিল ট্রেনিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। করমুক্ত আয়সীমা সবার জন্য বাড়ানো উচিত। নারীদের জন্য ৫ লাখ করা যেতে পারে। বাজেট বই দেওয়া না হলেও একটা মনিটরিং রিপোর্ট দেওয়ার জোর দাবি জানাই।

মডারেটর হিসেবে যুক্ত হয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাজেট হলো আর্থিক খতিয়ান। যেকোনো দেশের উন্নতির জন্য নারীর অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ, ও রাষ্ট্র নারীকে সহায়তা করছে তবে নারীর অংশীদারত্বের খতিয়ান বাজেটে কোথাও দেখি না। এর স্বীকৃতি দিতে হবে। জেন্ডার বাজেটের ধারাবাহিক পরীবিক্ষণ মূল্যায়ন করতে হবে ; প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

জেইউ/এসকেডি