তিন মন্ত্রণালয় ও ছয় দপ্তরে নেই সচিব, আটকে আছে গুরুত্বপূর্ণ কাজ
গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি সরকারের ছয়টি দপ্তরে এই মুহূর্তে কোনো সচিব নেই। এসব পদে অতিরিক্ত সচিবরা রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। সচিব না থাকায় এসব মন্ত্রণালয়ের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সচিব পদে শূন্যতা দেখা দিলে সাধারণত অতিরিক্ত সচিবদের মধ্য থেকেই পদোন্নতি দিয়ে সেই পদ পূরণ করা হয়। বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ২২২টি হলেও এই পদে কর্মরত আছেন চার শতাধিক কর্মকর্তা। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় জনবল যথেষ্ট।
বিজ্ঞাপন
তবুও সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকা সরকারের দূরদর্শিতার ঘাটতি বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।
৬ মাস ধরে সচিব নেই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে
বিজ্ঞাপন
২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহবুব বেলাল হায়দারকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। এরপর ২০ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে সেখানে বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির এক মাস নয়দিন পর অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে আবারও বদলি করা হয়। এরপর থেকে (ছয় মাস) এই মন্ত্রণালয়ে সচিব নেই। বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।
দেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মাছ ও গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধি করে এটি দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তা করছে। নীতি ও উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মানুষের পুষ্টি ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতেও এ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, মেরিন ফিশারিজ একাডেমী, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর।
তবে মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ শূন্য থাকায় অনেক কাজ ব্যহত হচ্ছে এবং নীতি কার্যকর করতে দেরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন
এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কাজ যেমন মেম্বার দিয়ে হয় না, তেমনি সচিবের কাজও রুটিন দায়িত্বে সম্ভব নয়। গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো ঝুলে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ৬ মাস ধরে পূর্ণ সচিব না থাকায় এ মন্ত্রণালয়ের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে। কারণ রুটিন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সেসব কাজের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত না। তিনি শুধুমাত্র আগের হওয়া সিদ্ধান্তগুলোই বাস্তবায়ন করছেন।’
৩ মাসের বেশি সময় সচিব শূন্য সমবায় বিভাগ
গত ২৫ মার্চ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত তিন মাসের বেশি সময় হলেও এ বিভাগেও পূর্ণ সচিব নিয়োগ করা হয়নি। অতিরিক্ত সচিব মো. ইসমাইল হোসেন রুটিন দায়িত্বে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগও সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এ বিভাগের মূল কাজ হলো গ্রামীণ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সমবায় ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করা।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের কার্যক্রম দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
এ বিভাগের অধীনে মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সমবায় অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া; পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, গোপালগঞ্জ; পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ), ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ), বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ইউনিয়ন), বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড (বিএসবিএল) এবং বাংলাদেশ জাতীয় পল্লী উন্নয়ন সমবায় ফেডারেশন।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সচিব না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন, অর্থ বরাদ্দ ও বাস্তবায়নে অনেক জটিলতা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমে তদারকি ও সমন্বয় ঠিকমত হচ্ছে না। যার ফলে গ্রামীণ উদ্যোক্তা ও খামারিরা সময়মতো সুবিধা পাচ্ছে না।
সচিবশূন্য রয়েছে আরও ছয়টি দপ্তর। সেগুলো হলো- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় সংসদ সচিবালয়, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব), জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব), ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এবং জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব)
২ মাস ধরে টেলিযোগাযোগ বিভাগে সচিব নেই
৩০ এপ্রিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ড. মো. মুশফিকুর রহমান অবসর নেন। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেখানে নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম।
কাজের পরিধি অনুযায়ী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এটি দেশব্যাপী ইন্টারনেট, ডাক টেলিযোগাযোগ ও স্যাটেলাইট পরিষেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এ বিভাগের আওতায় রয়েছে একাধিক অধিদপ্তর, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। এর মধ্যে প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ডাক অধিদপ্তর, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল), বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেড (বিসিএসএল), টেলিফোন শিল্প সংস্থা লিমিটেড (টেশিস), টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড (টিবিএল), বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ।
ডাক ও টেলযোগাযোগ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রশাসনিকসহ সকল কার্যক্রম ঠিক রাখতে সচিবের উপস্থিতি অত্যাবশ্যক। আমাদের বিভাগ সচিবশূন্য অবস্থায় আছে। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা চাই দ্রুত পূর্ণ সচিব নিয়োগ দেওয়া হোক।’
আরও ছয় দপ্তরে সচিব নেই
এই তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ছাড়াও সচিবশূন্য রয়েছে আরও ছয়টি দপ্তর। সেগুলো হলো- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় সংসদ সচিবালয়, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব), জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব), ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এবং জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব)।
এর মধ্যে চাকরির মেয়াদ শেষে গত ১৬ জুন অবসরে গেছেন সংসদ সচিবালয়ের সচিব মিজানুর রহমান। এরপর গত ১৯ জুন একসঙ্গে চার সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
তারা হলেন- বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (সচিব) কাজী এনামুল হাসান, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব) সুকেশ কুমার সরকার, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মুহম্মদ ইবরাহিম ও জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) মো. সহিদ উল্যাহ।
এছাড়া ২৪ জুন দুদকের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনকে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়।
এসব পদে এখনও নতুন কোনো নিয়োগ করা হয়নি, ফলে সরকারি উচ্চ পদগুলো শূন্য থেকে চলছে।
কেন এসব পদ শূন্য?
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর তিন দিন পর, ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রশাসনে শুরু হয় ব্যাপক রদবদল। এই প্রক্রিয়ায় আগের সরকারের আস্থাভাজন অনেক কর্মকর্তাকে বদলি, ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এর ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়ে পড়ে, যা এখনো পূরণ হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সচিবের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এতদিন ধরে শূন্য থাকা নজিরবিহীন। নিকট অতীতে এমনটা দেখেননি তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, পদগুলো শূন্য হওয়ার পর তা পূরণ করতে অনেক দেরি হচ্ছে। সচিব নিয়োগে দেরির মূল কারণ তদবির ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল নিজ নিজ প্রার্থীকে শীর্ষ পদে বসানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে কোনো প্রার্থীর নামে সুপারিশ গেলে অন্য পক্ষ আপত্তি জানায়। এ কারণে ফাইল অনুমোদনের আগে বারবার ফেরত আসে। যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। সমালোচনার মুখে অনেক সময় সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়। এতে শূন্য পদে কাউকে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে রুটিন দায়িত্বে রাখা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যেও যোগ্য কর্মকর্তার অভাব দেখা দিয়েছে। কর্মরত অনেকেই রাজনৈতিকভাবে ‘আওয়ামী ঘরানার’ বা বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত। ফলে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য অনেক পদে ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া জনপ্রশাসনে বদলি ও নিয়োগের আগে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির মতামত নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে সময় আরও বেশি লাগছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। সচিব নিয়োগ এখন আর শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার একটি জটিল প্রক্রিয়া হয়ে গেছে। বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল, রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা নিজ নিজ পছন্দের কর্মকর্তাকে সচিব পদে বসানোর চেষ্টা করেন। ফলে একজন কর্মকর্তার নামে প্রস্তাব উঠলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য পক্ষ থেকে আপত্তি আসে। এতে ফাইল অনুমোদনের আগে বারবার ফেরত আসে, আর সময় লেগে যায় মাসের পর মাস।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, যারা পদোন্নতির যোগ্য, তাদের নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়। কেউ অতীতে সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কেউ আবার প্রশাসনে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন। এসব কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। আবার যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের নিয়েও সমালোচনা ওঠে—ফলে অনেক ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে সচিব নিয়োগের আগে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির মতামত নিতে হয়। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবরা আছেন। তাদের মতামত, যাচাই-বাছাই ও সম্মতি নিতে সময় অনেক বেশি লাগে। সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হচ্ছে।
সচিব পদে শূন্যতা সরকারের দূরদর্শিতার ঘাটতি
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট লেখক ফিরোজ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সচিব পদ খালি থাকলে জনস্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় ও জনসেবা ব্যাহত হয়। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব পদ এতদিন খালি পড়ে থাকা অত্যন্ত হতাশাজনক। এত গুরুত্বপূর্ণ পদে শূন্যতা সরকারের দূরদর্শিতার ঘাটতি নির্দেশ করে।
তিনি আরও বলেন, রুটিন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা কোনো নীতি-নির্ধারণী বা গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি শুধু আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেন, নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই এ অবস্থায় মন্ত্রণালয়গুলো কার্যত স্থবির হয়ে আছে।
সচিব পদ শূন্য থাকা প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, জনআকাঙ্ক্ষার রাষ্ট্র গড়তে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল দুর্বল প্রশাসনকে ঠিক করা। এর জন্য দরকার ছিল স্পষ্ট পরিকল্পনা, দূরদর্শিতা ও নিরপেক্ষ মনোভাব। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রস্তুতি ও প্রজ্ঞার অভাবই চোখে পড়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পনারও অভাব আছে।
যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাকে নিয়োগের চেষ্টা চলছে
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের (এপিডি) অতিরিক্ত সচিব এরফানুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সচিব পদে সবচেয়ে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাকে নিয়োগের চেষ্টা করছে। এজন্য সময় কিছুটা বেশি লাগছে, তবে বিষয়টি নিয়ে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
এর আগে সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, আমরা এখন যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছি। বয়স বাড়ছে, টেনিউর বাড়ছে, নানা চাহিদা বাড়ছে—সব মিলিয়ে যোগ্যতার মানদণ্ডে পুরোপুরি খাপ খায় এমন কর্মকর্তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, যারা বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব আছেন, তাদের মধ্য থেকেই পদোন্নতি দিয়ে অথবা চলমান সচিবদের রদবদলের মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ করা হবে। শিগগিরই এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
পদ খালি হলে যথাসম্ভব নিয়োগ দিতে হবে
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সচিব পদ খালি রাখা ঠিক নয়। দীর্ঘ মেয়াদে সচিব পদ শূন্য থাকলে নানারকম অসুবিধা হয়। তাই যখন পদ খালি হবে যথাসম্ভব ওই পদে নিয়োগ দিতে হবে।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সচিব পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক পদ। প্রশাসনিক কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় এবং নীতিনির্ধারণে জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য এ পদে সবসময় যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ দিতে সরকারকে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে।
এসএইচআর/এমএসএ