একযোগে সারা দেশে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে মসজিদগুলো উদ্বোধন করেন তিনি। 

মুজিববর্ষ উপলক্ষে, ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা দূর করে ইসলামের সঠিক বার্তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার দেশব্যাপী মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে।

মডেল মসজিদ প্রকল্পের উদ্দেশ্য

বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৫ এর বাস্তবায়ন। দেশব্যাপী মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে সারাদেশে শক্তিশালী ইসলামি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্মাণ করে সারাদেশে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও প্রকৃত মূল্যবোধের প্রচার ও দীক্ষাদান।

সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ও সে বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। পুরুষ ও নারী মুসল্লিদের জন্য নামাজ, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভৌত সুবিধা সৃষ্টি করা।

সর্বোপরি ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের পরিচর্যা ও প্রসারের পাশাপাশি সততা ও ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আনুগত্য সমর্থন সৃষ্টি করা।

প্রকল্প কার্যক্রম

অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর জেলা পর্যায়ে চার তলা ও উপজেলার জন্য তিন তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চার তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব মসজিদ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৬৯টি চার তলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এগুলো নির্মাণাধীন রয়েছে ৬৪টি জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায়। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২,৩৬০.০৯ বর্গমিটার। 

‘বি’ক্যাটাগরির ৪৭৫টি মসজিদের আয়তন হবে ১৬৮০.১৪ বর্গমিটার। এগুলো নির্মিত হচ্ছে সব উপজেলায়। আর ২০৫২.১২ বর্গমিটার আয়তনের ‘সি’ ক্যাটাগরির মসজিদ হবে ১৬টি উপকূলীয় এলাকায়। 

জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। আর উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একত্রে ৯০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন প্রতিটি মসজিদে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে।

যেসব সুবিধা থাকছে

নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা। প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের টয়লেটসহ নামাজের পৃথক ব্যবস্থা ও অটিজম কর্ণার। ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি। ইমাম ট্রেনিং সেন্টার, ইসলামিক গবেষণা ও দীনি দাওয়া কার্যক্রম। পবিত্র কুরআন হেফজখানা এবং শিশু ও গণশিক্ষার ব্যবস্থা।

দেশী-বিদেশি পর্যটকদের আবাসন ও অতিথিশালা। মরদেহ গোসল ও কফিন বহনের ব্যবস্থা। হজ্জ যাত্রীদের নিবন্ধনসহ প্রশিক্ষণ। ইমামদের প্রশিক্ষণ গাড়ী পার্কিং এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা।

লাইব্রেরি সুবিধার আওতায় প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক একসঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।

মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হচ্ছে প্রকল্পের আওতায়। কেন্দ্রগুলোতে পবিত্র হজ পালনের জন্য ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকবে।

উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নীচ তলা ফাঁকা থাকবে। অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদগুলো নির্মাণের জন্য জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতিটি মসজিদ ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা করে; উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি মসজিদ ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকার প্রতিটি মসজিদ ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

আজ উদ্বোধন হওয়া ৫০টি মডেল মসজিদ

ঢাকার সাভার উপজেলা, ফরিদপুরের মধুখালী ও সালথা উপজেলা, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও কুলিয়ারচর উপজেলা, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা, রাজবাড়ি সদর উপজেলা, শরিয়তপুর সদর ও গোসাইহাট উপজেলা, বগুড়ার শারিয়াকান্দি, শেরপুর ও কাহালু উপজেলা, নওগাঁর সাপাহার ও পরশা উপজেলা সিরাজগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলা, পাবনার চাটমোহর উপজেলা, রাজশাহীর গোদাগারি ও পাবা উপজেলা।

দিনাজপুরের খানসামা ও বিরোল উপজেলা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা, পঞ্চগড় সদর ও দেবীগঞ্জ উপজেলা, রংপুর জেলা, সদর উপজেলা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা, নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও তারাকা উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলা, লোহাগড়া, মীরসরাইর ও সন্দ্বীপ উপজেলা।

এছাড়াও জামালপুর সদর ও ইসলামপুর উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর ও বিজয়নগর উপজেলা, ভোলা সদর, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা, কুষ্টিয়া সদর, খুলনা জেলা, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায়। 

এইউএ/ওএফ