গত মঙ্গলবার (৮ জুন) অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা পোস্ট ‘শেষ সময়ে রাবি ভিসির পথেই হাঁটছেন জাবি ভিসি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদটির বিষয়ে প্রতিবাদ পাঠিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুস সালাম মিঞা স্বাক্ষরিত প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদটি উদ্দেশ্যমূলক ও মনগড়া। ঢাকা পোস্ট-এর পাঠক এবং সংশ্লিষ্ট সকলের জ্ঞাতার্থে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও বিভাগে শিক্ষক এবং অফিসসমূহে জনবল সংকট থাকায় সেসব ইনস্টিটিউট, বিভাগ এবং অফিসের শূন্য পদের বিপরীতে বিভিন্ন সময়ে প্রেরিত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সুতরাং প্রকাশিত সংবাদে দেশের অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাজ-কর্মকে তুলনা করা শুধু অসামঞ্জস্য নয়; অপ্রত্যাশিত এবং দুঃখজনকও বটে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

এতদ্সঙ্গে কর্তৃপক্ষ আরও জানাচ্ছে যে, করোনা মহামারিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের অনিশ্চয়তা ও হতাশা দূর করার লক্ষ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের প্রশাসনিক নির্দেশে ১২ জুলাই ২০২০ থেকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। যা পরবর্তীতে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট কর্তৃক সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন লাভ করে। 

কর্তৃপক্ষ আরও জানাচ্ছে যে, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা খুশি মনে তাদের স্নাতক (সম্মান) সনদ নিয়ে চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। উপাচার্য কর্তৃক গৃহীত অনলাইন পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনসহ সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নীতি অনুসরণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইনস্টিটিউট, বিভাগ এবং অফিসসমূহে শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

করোনা মহামারিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে অতি সম্প্রতি প্রণীত 'Examination Ordinance During Disaster-2021' প্রণয়ন করা হয়েছে। এই অর্ডিন্যান্স অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম এবং অফিসগুলোর স্বাভাবিক কাজ-কর্ম সম্পন্ন করা পরিশ্রম ও সময়সাধ্য বিষয়। এসব কারণে শিক্ষক ও অফিসার নিয়োগের আবশ্যকতা রয়েছে।

যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা সত্ত্বেও এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করা অগ্রহণযোগ এবং নিন্দনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপর্যুক্ত প্রতিবাদ প্রকাশ করে সহযোগিতা করার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছেন।

প্রতিবেদকের বক্তব্য

আলোচ্য প্রতিবেদনটিতে উঠে আসা তথ্য ও বক্তব্য কোনোভাবেই প্রতিবেদকের মনগড়া নয়। বরং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ইউজিসির সদস্যদের বক্তব্য প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। সম্পূর্ণ বক্তব্য রিপোর্টারের মনগড়া বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মূলত সত্যকে অস্বীকার করতে চাইছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়ার সক্ষমতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ভাইভার একটা সম্পর্ক দেখানোর চেষ্টা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগের ভাইভার ব্যাপারে স্বয়ং ইউজিসির সদস্য ড. দিল আফরোজা বেগমের বক্তব্য হলো- ‘অনলাইনে শিক্ষক নিয়োগ কোনোভাবেই হতে পারে না। বোর্ডে একজন প্রার্থীকে সামনাসামনি দেখতে হয়, তার সার্টিফিকেট দেখতে হয়। অনলাইনে তা কীভাবে সম্ভব?’

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ইউজিসির সদস্য ড. দিল আফরোজা বেগমের বক্তব্য হলো- ‘ইউজিসির কাছে শিক্ষক নিয়োগের কোনো চাহিদাই আসেনি।’ শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা না জানিয়ে ৩৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে চাওয়া প্রমাণ করে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে নিয়ম অমান্য করে নিয়োগের যে হিড়িক পড়ে, জাহাঙ্গীরনগরে তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। ইউজিসি সদস্যের বক্তব্যতেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

সুতরাং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অন্তত ৩৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া এবং তা ঘিরে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বক্তব্য কিংবা অভিযোগের প্রেক্ষিতই উঠে এসেছে প্রকাশিত সংবাদে। সংবাদের কোনো বক্তব্য ‘রিপোর্টারের মনগড়া’ নয়।

জেডএস/জেএস