মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের নেটওয়ার্ক (টাওয়ার) সচল রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং সার্বস কমিউনিকেশন লিমিটেডের অপহরণ হওয়া চারজন টেলিকম কর্মীকে উদ্ধার করাসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট টেলিকমিউনিকেশন কর্মচারী ইউনিয়ন।

সোমবার (২৮ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ইউনিয়নের সভাপতি মো. মাকসুদুর রহমান রাকিব।

ইউনিয়নের দাবিগুলো হচ্ছে— অপহৃত সব কর্মীকে অবিলম্বে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করতে হবে, অপহরণকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে, পার্বত্য অঞ্চলে টেলিকম খাতের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে, টাওয়ার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা ও তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিক ও দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে মাকসুদুর রহমান রাকিব বলেন, গত ১৯ এপ্রিল সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার ময়ুবখালী এলাকায় রবি টাওয়ারে কাজ করার সময় মো. ইসমাইল মিয়া ও আব্রো মারমা অপহৃত হন। অনুরূপভাবে ৫ জুন সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার লেলাং ইউনিয়নের কর্ণফুলী বাজার এলাকায় রবি টাওয়ারে দায়িত্ব পালনকালে মোহাম্মদ সুমন ইসলাম ও আব্দুর রহিম সন্ত্রাসীদের দ্বারা অপহৃত হন। এখন পর্যন্ত থানা বা সংশ্লিষ্ট মোবাইল কোম্পানি তাদের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, অপহৃত টেলিকম কর্মীরা মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটার নেটওয়ার্ক পরিচালনায় নিয়োজিত ইডটকো বাংলাদেশ লিমিটেড ও সার্বস কমিউনিকেশন লিমিটেডের অধীনে কাজ করছিলেন। তবে উদ্বেগজনকভাবে দেখা গেছে, এই দুটি প্রতিষ্ঠান এবং রবি আজিয়াটা এখন পর্যন্ত অপহৃতদের উদ্ধারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ভুক্তভোগীদের পরিবার একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও, তারা কেবল আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে এবং বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি।

ইউনিয়নের সভাপতি বলেন, পরপর চারজন টেলিকম কর্মী অপহরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মরত শত শত টেকনিশিয়ানের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসীরা সরাসরি মোবাইল টাওয়ারে দায়িত্বে থাকা কর্মীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে, যা শুধু ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য নয় বরং জাতীয় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা, টাওয়ার মেরামত ও সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিতদের সঙ্গে পাহাড়ি একটি গ্রুপের বিরোধের জেরে এই অপহরণ সংঘটিত হয়েছে। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, যা পরবর্তীতে মীমাংসাও হয়েছিল। ইসমাইল ও আব্রো মারমার অপহরণকারীরা তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোম্পানির সঙ্গে কথা বলতে বলেন। কিন্তু পরিবার বারবার রবি আজিয়াটা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কেবল সময়ক্ষেপণ করে ‘আজ নয়, কাল’ বলে এড়িয়ে যান। বর্তমানে অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে আবারও কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হলেও, কোম্পানি বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও অপহরণের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে, কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি এবং নিরব ভূমিকাই পালন করে যাচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোবাইল টাওয়ার রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত টেলিকম কর্মীদের ধারাবাহিক অপহরণের ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি বলেও জানান ইউনিয়নের সভাপতি।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাইভেট টেলিকমিউনিকেশন কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আলিউজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মানিকসহ অপহরণ হওয়া টেলিকম কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচএন/এমএন