বাজেটে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ ৯ দফা দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে স্মারকলিপি দিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। সোমবার (১৪ জুন) জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপিত হয়েছে। এটা বিস্ময়কর যে এই দুর্যোগেও রেমিটেন্স, কৃষি, শিল্প, সেবা খাত মিলিয়ে বাংলাদেশের যে উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে তার ফলে জিডিপির আকার বেড়ে ৩০ লাখ কোটির বেশি দাঁড়িয়েছে এবং বাজেটের আকারও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এতে আরও বলে হয়, এবারের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা গত অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। জিডিপি বৃদ্ধি এবং বিশাল এই বাজেট প্রমাণ করে করোনাকালেও শ্রমজীবী মানুষ তাদের ভূমিকা পালনে অবহেলা করেনি। কিন্তু এ বাজেটে প্রাপ্তির ক্ষেত্রে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। বাজেটের বিশালত্ব নিয়ে অর্থমন্ত্রী গর্ব করলেও এতে শ্রমিকদের জন্য সুস্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। বাজেটে মালিকদের জন্য কর ছাড়, প্রণোদনা, ঋণ সহজিকরণ, খেলাপি ঋণ মওকুফ, উদ্যোক্তা সহায়তাসহ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনেক সুযোগ রাখা হলেও শ্রমজীবী মানুষের জন্য উল্লেখ করার মত কিছুই রাখা হয়নি।

বাজেটের সবচেয়ে বড় আয় আসবে পরোক্ষ কর থেকে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, এই বিশাল ভ্যাট-ট্যাক্সের একটা বড় অংশ বহন করবে শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষ যারা কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে শ্রম দিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে, যাদের শ্রমে রফতানি আয় এবং রেমিটেন্স আসে সেই দেশি ও প্রবাসী শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কোনো আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেননি অর্থমন্ত্রী। বাজেট প্রণয়নের আগে সমাজের অনেক অংশের সঙ্গে মতবিনিময় করলেও শ্রমজীবী বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা বাজেটে শ্রমিক স্বার্থ নিশ্চিত করতে আপনার (স্পিকার) মাধ্যমে জাতীয় সংসদের কাছে শ্রমিকদের আকাঙ্ক্ষা ও দাবি উপস্থাপন করতে চাই।

শ্রমিক কর্মচারী স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক শহিদুল্লাহ চৌধুরী ও নূর কুতুব মান্নানের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে থাকা ৯ দফা দাবিগুলো হচ্ছে- ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য শ্রমিক কর্মচারীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশন ব্যবস্থা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সুলভ মূল্যে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য বরাদ্দ করা; কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত হলে চিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনসহ সামাজিক বেষ্টনীর জন্য বরাদ্দ রাখা; বাজেটে পাট, চিনি শিল্প পুনরুদ্ধার ও রক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখা; শ্রমিকদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা সামাজিক সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা।

এছাড়াও শিল্পঘন এলাকায় শ্রমজীবী হাসপাতাল, শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা; অর্থ পাচারকারী, ঋণ খেলাপিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে প্রাপ্ত অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করা; দুর্নীতিরোধে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রেখে তা বাজেয়াপ্ত ও আদায় করে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করার উদ্যোগ নেওয়া; শ্রমজীবীদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা; করোনায় কর্মহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সহায়তার বরাদ্দ করা এবং ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ বাড়ানো।

এমএইচএন/এমএইচএস