ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রণীত খসড়া নীতিমালা বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে রিকশা-ব্যাটারি রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন, সদস্য সচিব মনীষা চক্রবর্তী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, যে কোনো মোটরযান বা যান্ত্রিক যানের নিবন্ধন বা লাইসেন্স দেওয়ার একমাত্র কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ। কিন্তু কোনো সক্ষমতা বা প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন না থাকা সত্ত্বেও সিটি কর্পোরেশনকে এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে? বিআরটিএ ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে একটি নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসার জন্য ইতিপূর্বে ২০১৯, ২০২২, ২০২৪ সালে ২টি খসড়া নীতিমালা প্রকাশিত করেছিল। এর মধ্যে একটি নীতিমালা কার্যকর হয়েছে, আর একটি অপেক্ষায় আছে। আমরা বারবার কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে সেগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছিলাম। সর্বশেষ ২০২৫ সালে আবার নতুন করে বৈদ্যুতিক খ্রি-হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫ প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি এবং এই নীতিমালার ওপর সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা গত ২০ আগস্ট অনেকগুলো সংশোধনী ও সুপারিশ বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপির মাধ্যমে পেশ করেছি। 

আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, গত ২৮ আগস্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত ২০২৫ সালের ৪৫ নং অধ্যাদেশের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ (২০০৯ এর ৬০ নং আইন) এর অধিকতর সংশোধনের লক্ষ্যে কোনো রকম কাঠামোগত প্রস্তুতি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো সমন্বয় ছাড়া, দুটি খসড়া নীতিমালা থাকার পরেও কোনো অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন, নীতিমালা নির্ধারণসহ এ বিষয়ে যাবতীয় ক্ষমতা সিটি কর্পোরেশনের হাতে সমর্পণ করে একটি শ্রমিকস্বার্থ ও গণ স্বার্থবিরোধী অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

এ সময় যেসব দাবি উপস্থাপন করা হয় সেগুলো হলো-

১. ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সঙ্গে যুক্ত ৬০ লাখ মানুষকে জিম্মি করার জন্য স্থানীয় সরকার আইন গ্রহণযোগ্য নয়, এটা পুনঃবিবেচনা করতে হবে।

২. নীতিমালা চূড়ান্ত না করে ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ ও প্রতিটি ওয়ার্ডে নিবন্ধনে সঙ্গে যুক্ত তথাকথিত মালিক/সিটি কর্পোরেশনের সিন্ডিকেট সদস্য এবং তাদের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

৩. চলমান ৩টি নীতিমালার ইতিবাচক দিক ও সংগ্রাম পরিষদের প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়ে একটি অভিন্ন ও সমন্বিত নীতিমালা চূড়ান্ত করে বিআরটিএর অধীনে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রিক যানবাহনের নিবন্ধন, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স, রুট পারমিট প্রদান করতে হবে।

৪. সারা দেশে বর্তমানে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে ও প্রযুক্তিতে তৈরিকৃত ব্যাটারি রিকশা, ইজিবাইক, পাখিসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সরকার অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী সংশোধন বা মোডিফাইড করার জন্য অন্তত ২ বছর সময় দিতে হবে।

৫. নীতিমালার নামে ব্যাটারিচালিত/ইলেকট্রিক যানবাহন উৎপাদন, বিপণনে একচেটিয়া ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়িদের সুবিধা দেওয়া যাবে না। গাড়ির মান ও দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বর্তমান স্থানীয় উৎপাদককে বিআরটিএ বা সরকার অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত যানবাহন উৎপাদন ও বিপণনের অনুমতি প্রদান এবং মেকানিকদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. সড়কের শৃঙ্খলার জন্য প্রতিটি সড়ক মহাসড়কে স্বল্প গতির ও লোকাল যানবাহনের জন্য পৃথক লেন/ সার্ভিস লেন নির্মাণ, চালকসহ সংশ্লিষ্টদের ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

ওএফএ/এমএন