দেশের সব কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারের বন্দিদের জন্য সুখবর! তাদের একাকীত্ব ও বন্দিজীবনে কিছুটা চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা অধিদফতর। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ৬৮টি কারাগারের সব বন্দিদের জন্য কেনা হবে টেলিভিশন (টিভি)। চিত্তবিনোদনের অংশ হিসেবে সব কারাবন্দি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ২ ঘণ্টা করে টিভি দেখার সুযোগ পাবেন। এরইমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা কারা অধিদফতর থেকে দেশের সব কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুন (রোববার) কারা অধিদফতর থেকে আটক বন্দিদের চিত্তবিনোদনের অংশ হিসেবে টিভি কেনার জন্য একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। অধিদফতরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিচালক কর্নেল মো. আবরার হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চিঠিটি দেশের সব কারা উপমহাপরিদর্শক, প্রতিটি কেন্দ্রীয় ও জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার/জেল সুপার বরাবর পাঠানো হয়েছে।

প্রতিটি কারাগারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিভি কেনার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। দেশের কয়েকটি কারাগারে এই চিঠি পৌঁছে গেলেও অনেক কারাগারে এখনও পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে। সব কারাগারে চিঠি পৌঁছানোর পর এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহাবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সংক্রান্ত চিঠি আমি এখনও পাইনি। চিঠি পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কারাগারে কেন টিভি দেখার আয়োজন 

জানা গেছে, কারাগারে আটক বন্দিরা সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করলেও তাদের চিত্তবিনোদনের অভাব রয়েছে। সাধারণত জাতীয় কিংবা ধর্মীয় উৎসব ছাড়া তাদের আর বিনোদনের তেমন ব্যবস্থা নেই। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি থেকে তারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাই কারাগারে বন্দিদের একঘেয়েমি নিরসনে বিনোদন নিশ্চিত করা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করছে কারা কর্তৃপক্ষ। এজন্য বন্দিদের বিনোদন নিশ্চিত করতে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ক্যান্টিন ফান্ড অথবা নিজস্ব ফান্ড থেকে টেলিভিশন কেনার অনুমতি দিয়েছে কারা অধিদফতর।

কারা কর্তৃপক্ষ মনে করছে, দিনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ২ ঘণ্টা করে হলেও টিভি দেখার সুযোগ পেলে বন্দিদের বিনোদনের চাহিদা কিছুটা পূরণ হবে। এতে তাদের মধ্যে হতাশা কমবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

বন্দিদের জন্য যেভাবে কেনা হবে টিভি 

দেশের সব কারাগারের বন্দিদের বিনোদনের জন্য টিভি কিনতে কত টাকা খরচ হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। প্রতিটি কারাগারের নিজস্ব কিছু ফান্ড রয়েছে। যেমন- ক্যান্টিন ও কল্যাণ ফান্ড। ক্যান্টিন ফান্ডের লভ্যাংশ কিছুটা কারাগার নিজে রাখে এবং কিছুটা সরকারকে দেয়। কারাগারগুলোকে নিজস্ব লভ্যাংশের টাকা থেকে টিভি কেনার জন্য বলা হয়েছে। তবে যেসব কারাগারে ফান্ড সীমিত সেখানে এখনই টিভি কিনতে হবে না। সুবিধাজনক সময়ে সেসব কারাগার টিভি কিনবে। আর যেসব কারাগারের পর্যাপ্ত ফান্ড রয়েছে নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে দ্রুত টিভি কিনতে হবে। প্রতিটি কারাগার তার নিজস্ব ফান্ড থেকেই টিভি কিনবে। এক্ষেত্রে কারাগারগুলোর জন্য বিশেষ কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে না। 

প্রতিটি কারাগারে কয়টি করে টিভি থাকবে

প্রতিটি কারাগারে বন্দিদের জন্য কয়টি করে টিভি কেনা হবে তা এখনও কারা অধিদফতর থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। টিভি সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে কারাগারের আকার ও বন্দির সংখ্যা অনুযায়ী। প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে, প্রতিটি কারাগারের দুটি ওয়ার্ডের বন্দিদের জন্য একটি করে টিভি কেনা হবে। তবে বড় কারাগার ও যেসব কারাগারের ওয়ার্ডে বন্দি সংখ্যা অন্যসব কারাগার থেকে বেশি সেসব কারাগারের প্রতি দুটি ওয়ার্ডের জন্য একাধিক টিভি বরাদ্দ থাকতে পারে। টিভির সংখ্যা এখনও নির্ধারণ না হওয়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী সংখ্যা বাড়ানোও হতে পারে।

দিনের বেলায় বন্দিদের বিভিন্ন রকম কাজ এবং কারা কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল কাজ থাকায় সে সময় বন্দিরা টিভি দেখতে পারবেন না। তবে লকআপ অর্থাৎ সন্ধ্যার পর বন্দিদের তেমন কোনো কাজ থাকে না। সেসময় তারা টিভি দেখার সুযোগ পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে টিভি দেখার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। 

কারাগারে যেখানে টিভি দেখবেন বন্দিরা 

কারা সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব কারাগারের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে হল রুম রয়েছে। এই হল রুমে একসঙ্গে ৭০-৮০ জন বন্দি বসতে পারেন। প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে প্রতি দুটি ওয়ার্ডের জন্য একটি হল রুমে একটি করে টিভি রাখা হবে। তবে কোনো ওয়ার্ডের বন্দি সংখ্যা বেশি হলে বা দুই ওয়ার্ড মিলে বন্দির সংখ্যা একশর বেশি হলে সেক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিভি বরাদ্দ করা হতে পারে।

কখন টিভি দেখতে পারবেন

বন্দিদের টিভি দেখার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চলবে কারা কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বন্দিরা টিভি দেখতে পারবেন না। দিনের বেলায় বন্দিদের বিভিন্ন রকম কাজ এবং কারা কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল কাজ থাকায় সে সময় বন্দিরা টিভি দেখতে পারবেন না। তবে লকআপ অর্থাৎ সন্ধ্যার পর বন্দিদের তেমন কোনো কাজ থাকে না। সেসময় তারা টিভি দেখার সুযোগ পেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে টিভি দেখার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হবে। প্রতি সন্ধ্যায় ২ ঘণ্টা করে টিভি দেখতে দেওয়া হতে পারে। প্রাথমিকভাবে টিভি দেখার এই সময় ঠিক করা হলেও তা এখনও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি। টিভি দেখার সময় ঠিক করার জন্য দেশের প্রতিটি কারাগারের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছে কারা অধিদফতর।

কোন কোন চ্যানেল দেখতে পারবেন 

কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বন্দিদের টিভি দেখার বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশন অর্থাৎ বিটিভি ছাড়া অন্য কোনো টেলিভিশন দেখার সুযোগ পাবেন না বন্দিরা। সেক্ষেত্রে প্রথম দিকে শুধুমাত্র সংবাদ দেখতে পারবেন বন্দিরা। পরে প্রয়োজন সাপেক্ষে চ্যানেল ও অনুষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে পারে কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বন্দিরা টিভি দেখতে এসে একসঙ্গে জমায়েত হয়ে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারেন সেদিকেও বিশেষ নজর রাখবে কারা কর্তৃপক্ষ।

কারাগারের বন্দিদের টিভি দেখার সিদ্ধান্তের সার্বিক বিষয় নিয়ে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিচালক কর্নেল মো. আবরার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্দিরা কারাগারে কষ্টকর জীবন-যাপন করেন। তাদের বিনোদনের জন্য যদি কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা যায় আমরা সেই চেষ্টা করব। দেখা যাক বিষয়টি কত দূর এগোয়। 

তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি কারাগারে এ বিষয়ে একটি মতামত বা নির্দেশনা দিয়েছি। কারাগারগুলোকে নিজস্ব অর্থায়নে বন্দিদের জন্য টিভি কেনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। কারাগারের নিজস্ব ফান্ড থেকে এটুকু সাহায্য বন্দিদের জন্য করতেই পারে। তবে বন্দিদের জন্য টিভি কেনার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। এ বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করেছি। বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হলে বন্দিদের টিভি দেখার ক্ষেত্রে থাকবে বিশেষ নিয়ম।

এমএসি/এইচকে/জেডএস