করোনার কারণে থমকে আছে রাজধানীর বুকে দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার নৌপথ তৈরির কার্যক্রম/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

রাজধানীবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি দিতে ধানমন্ডি লেক থেকে নতুন নৌপথ চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধানমন্ডি লেক থেকে পান্থপথের বিদ্যমান রাস্তায় দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার করে নৌপথ যুক্ত হবে হাতিরঝিলের সঙ্গে।

হাতিরঝিল থেকে গুলশান হয়ে বারিধারা পর্যন্ত বর্ধিত হবে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নৌপথ। আর এই প্রকল্পটির অর্থায়ন করবে রাজউক। যানজটে নাকাল নগরবাসীকে এমন এক স্বপ্ন দেখিয়েই থেমে আছে রাজউক। দীর্ঘ নৌপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তাদের কার্যক্রমে আর কোনো অগ্রগতি নেই।

কয়েকমাস আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বোর্ড সভায় ধানমন্ডি লেক থেকে পান্থপথের বিদ্যমান রাস্তায় দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার করে নৌপথ তৈরি করে হাতিরঝিল দিয়ে বারিধারা পর্যন্ত করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এই নৌপথটি ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ হওয়ার কথা ছিল। যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী রাজউকের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিল। তাছাড়া ওইসময় রাজউকও ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথ তৈরির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড শুরু করে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করে রাজউক। সেইসঙ্গে বুয়েটও এই প্রকল্পের ফিজিবিলিটি টেস্ট করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু রাজধানীর বুকে দীর্ঘ ১১ কিলোমিটার নৌপথ তৈরির কার্যক্রম এই পর্যন্তই থেমে আছে। ধানমন্ডি থেকে বারিধারা পর্যন্ত নৌপথের স্বপ্ন দেখিয়েই রাজউক আর সামনে এগিয়ে যেতে পারেনি।

১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌপথের বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করছিলেন রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ এবং ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম। এ বিষয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধানমন্ডি লেক থেকে পান্থপথের বিদ্যমান রাস্তায় দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নৌপথটি হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। এই নৌপথটি আবার হাতিরঝিল থেকে গুলশান হয়ে বারিধারা পর্যন্ত বর্ধিত করার জন্য পরিকল্পনা আমাদের অব্যাহত আছে। এর সার্বিক বিষয় নিয়ে বুয়েটের সঙ্গে আমাদের সভা হয়েছে। তারা আমাদের ফিডব্যাক জানাবে। কিন্তু  করোনাকালে বুয়েট এখন বন্ধ, তাই এটির কোনো অগ্রগতি এখন নেই। প্রথমেই তারা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করবে এরপর মতামত জানাবে। তবে আপাতত এই নৌপথ নিয়ে পরিকল্পনার কোনো অগ্রগতি নেই।

এদিকে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ২৬টি খাল দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর বাইরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে থাকা রাজধানীর ১৭টি খাল, জলাশয় রয়েছে। এই খাল ও জলাশয়গুলোও দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১৮ মে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা মহানগরীর খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেই সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ, সংস্থা ও দফতরের প্রতিনিধি নিয়ে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি একটি রিপোর্ট প্রদান করবে। রিপোর্ট অনুযায়ী হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এসব খাল, জলাশয়ের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মালিকানা যদি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে চলে যায় তাহলে নৌপথের এই কাজ আর করতে পারবে না রাজউক।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, ধানমন্ডি লেক থেকে পান্থপথের বিদ্যমান রাস্তায় দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে প্রস্তাবিত যে নৌপথটি হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত করতে চাচ্ছে রাজউক, এটি যোগাযোগের জন্য অনেক ভালো একটি মাধ্যম হবে। তবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে থাকা রাজধানীর ১৭টি খাল, জলাশয় রয়েছে সেগুলো সিটি করপোরেশনের মালিকানায় চলে গেলে এই নৌপথের উদ্যোগ বা বাস্তবায়নের ক্ষমতা আর রাজউকের হাতে থাকবে না। সেই কারণে রাজউক এখন আদৌ করতে পারবে কী না, এটা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদিল মুহম্মদ খান এই নৌপথের বিরোধিতা করে বলেন, শুধু পান্থপথ খাল উদ্ধার করে এ নৌপথ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হলে তা কার্যকর হবে না। ধানমন্ডি থেকে পান্থপথ হয়ে অনেক বড় বড় স্থাপনা হয়ে গেছে। সেগুলো যদি আমরা অপসারণ করতে চাই তাহলে আর্থিক ব্যয় বাড়বে। তাই এরকম ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলো এখনই না নেওয়াই উচিত।

তিনি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আমাদের অনেক প্রায়োডেটি বেস প্রকল্প বাদ দিয়ে অনেক মেগা প্রকল্পের দিকে আগ্রহী হচ্ছে বিভিন্ন করপোরেশন। এটা কোন কোন ক্ষেত্রে ইতিবাচক কোনটা নেতিবাচক। অল্পতে করার মতো এখনও আমাদের অনেক প্রকল্প আছে। আমরা যারা ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করি তারা অবশ্যই বলবেন, এই মুহূর্তে ধানমন্ডি থেকে গুলশান বারিধারা পর্যন্ত নৌপথ হলে খুব একটা সুবিধা পাওয়া যাবে না।

এএসএস/এসকেডি