আগামী পাঁচ বছরে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সরকার চারটি জাতীয় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে— যৌন হয়রানি প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন, অবৈতনিক গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন, রাজনৈতিক ও জনপরিসরে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, এবং নারীর সমতা ও ক্ষমতায়নের প্রতি সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশের শীর্ষ অগ্রাধিকার। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ক্রীড়াঙ্গন, বোর্ড রুম থেকে গবেষণাগার—সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। নারীর অবদান বিশ্বে অর্ধেকেরও বেশি। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়— ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো প্রকাশিত ‘আনপেইড হাউজহোল্ড প্রোডাকশন স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট’ জরিপে দেখা গেছে, অবৈতনিক পরিচর্যা ও গৃহস্থালি কাজের ৮৫ শতাংশেরও বেশি কাজ একাই নারীরা করে থাকেন। এর অর্থ, এসব কাজ বাংলাদেশের স্থূল দেশজ উৎপাদনের প্রায় ১৬ শতাংশের সমতুল্য।

বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশের মেয়েরা শ্রেণিকক্ষ থেকে বোর্ডরুম, গবেষণাগার থেকে ক্রীড়াঙ্গন—সবখানেই সফলতার নজির স্থাপন করছে। সম্প্রতি দেশের নারী ফুটবল দল আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ানশিপ জিতেছে, আন্তঃএশীয় প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে।

ড. ইউনূস জানান, বেইজিং+৩০ অ্যাকশন এজেন্ডার অধীনে এই চারটি জাতীয় প্রতিশ্রুতি আগামী পাঁচ বছরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও সক্রিয়। বিমস্টেক, বিবিন, এশিয়ান হাইওয়ে ও সাসেকের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে বাণিজ্য ও সংযোগ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আসিয়ানের কার্যকরী ফোরামে যুক্ত হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের ন্যায্য ও সহমর্মী ব্যবহার নিশ্চিত করতে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতাও বাংলাদেশের অঙ্গীকারের অংশ।

ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন শুধু সামাজিক ন্যায়বিচার নয়, এটি দেশের টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি। আগামী পাঁচ বছরে এই চারটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’

টিআই/এমএন