শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কার্যকর হয়নি, নেই বীমা ও সামাজিক সুরক্ষা
চট্টগ্রামের শিপ ব্রেকিং কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের কর্মপরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে ওঠে এসেছে শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্রের অভাব, ন্যূনতম মজুরি কার্যকর না হওয়া, ওভারটাইম ভাতা না দেওয়া, সামাজিক সুরক্ষার অনুপস্থিতি এবং কারখানাগুলোতে একের পর এক দুর্ঘটনার চিত্র। শ্রম আইন থাকলেও শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা এখনও কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, তাদের পরিচালিত জরিপে অংশ নেন ৫৮ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে কাটার ম্যান ৩৩ জন ও হেলপার ১৭ জন। জরিপে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের মধ্যে ৫৩ জনেরই কোনো নিয়োগপত্র নেই, ২৭ জনের পরিচয়পত্রও নেই। কাটার ম্যানদের বড় অংশ মাসে মাত্র ৮–১২ হাজার টাকা আয় করেন, হেল্পারদের আয় আরও কম। ফোরম্যান একজনের বেতন ২২ হাজার হলেও তা ব্যতিক্রম হিসেবেই থেকে গেছে।
বিজ্ঞাপন
অধিকাংশ শ্রমিককে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। ওভারটাইম ভাতা পান ৩৯ জন, বাকি ১৯ জন সেই অধিকার থেকেও বঞ্চিত। মাত্র ৯ জন শ্রমিক সবেতন ছুটি পান, ৪৯ জনের ছুটি নেই। সামাজিক সুরক্ষা বা গ্রুপ বীমা সুবিধা নেই কারও কাছেই।
বিজ্ঞাপন
কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অপ্রতুল। ৮ জন শ্রমিক কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পান না। মাত্র ১১ জনের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেফটি কমিটির অস্তিত্ব আছে কি না, সে বিষয়ে অনেকে অজ্ঞ। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে মালিকের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ আছে, বলেছেন মাত্র ১০ জন। ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যপদ রয়েছে ৩৯ জনের। তবে ভয়, অজ্ঞতা এবং চাকরি হারানোর আশঙ্কায় সবাই যুক্ত হতে চাননি। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও চিত্র একই। ২১ জন শ্রমিক কোনো প্রশিক্ষণই পাননি।
বিলসের জাহাজভাঙা শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক তথ্য কেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর ফজলুল কবির মিন্টু বলেন, গত তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) সীতাকুণ্ডে অবস্থিত কারখানাগুলোতে অন্তত ১৪টি দুর্ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ঘটনায় জিরি সুবেদার শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে চারজন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। এভাবে নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান, ন্যূনতম মজুরি কার্যকর, সামাজিক সুরক্ষা, গ্রুপ বীমা এবং কার্যকর সেফটি কমিটি গঠন ছাড়া শিপ ব্রেকিং শিল্পকে টেকসই উন্নয়নের পথে নেওয়া সম্ভব নয়।
এমআর/এমজে