চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কাজী সালাউদ্দিনকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনায় সেই চোলাই মদবাহী গাড়ির চালকসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৯ জুন) পাঁচলাইশ এলাকায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মোখলেছুর রহমান।

গ্রেফতাররা হলেন- মাইক্রোবাসের চালক মো. বেলাল (৩৪), চোলাই মদ বিক্রেতা মো. রাশেদ ওরফে রাসেল ও চোলাই মদ বিক্রেতা সামশুল আলম।

গত ১১ জুন (শুক্রবার) ভোরে চান্দগাঁও থানার মেহেরাজ চৌধুরী ঘাটা এলাকায় এএসআই কাজী মো. সালাউদ্দিনকে চাপা দেয় মাদকবাহী মাইক্রোবাসটি। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কাজী মো. সালাউদ্দিন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজী পাড়া এলাকার কাজী নাদের জামানের ছেলে। তিনি ২০১৮ সাল থেকে চান্দগাঁও থানায় এএসআই পদে কর্মরত ছিলেন। এএসআই নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় পেনাল কোড ৩০২/৩২৫/৩০৭/৩৪ ধারায় একটি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটিসহ মোট দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রথমে ঘটনাস্থলের আশপাশের কিছু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও প্রযুক্তির সহায়তায় মাইক্রোবাস চালককে শনাক্ত করা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাস চালক বেলালকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে চোলাই মদ বিক্রেতা দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, চক্রটি রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চোলাই মদ সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম নগরী, বোয়ালখালী ও পটিয়া থানা এলাকায় বিক্রি করত। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতার বেলালের তথ্যমতে মাদকবাহী মাইক্রোবাসটিকে স্কট দেওয়া একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

ঘটনার দিন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেছিলেন, কাজী সালাউদ্দিন চান্দগাঁও থানার মৌলভী পুকুর পাড় থেকে সিঅ্যান্ডবি ও আশপাশের এলাকায় নৈশ ডিউটিতে ছিলেন। এসময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এএসআই কাজী মো. সালাহউদ্দীন জানতে পারেন, একটি কালো মাইক্রোবাসযোগে (রেজি. নং-ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৩৬৬৫) পার্বত্য এলাকা থেকে চোলাই মদ নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের দিকে আসছে। এই সংবাদের প্রেক্ষিতে এএসআই কাজী মো. সালাহউদ্দীন তার সঙ্গে থাকা ফোর্সসহ ভোর চারটার দিকে মেহেরাজখান ঘাটা পেট্রোল পাম্পের সামনে রাস্তার উপর গাড়িটিকে থামানোর জন্য সিগনাল দেয়। পরে চালক গাড়িটি থামানোর মতো করে গতি কমিয়ে আনলে এএসআই কাজী মো. সালাউদ্দিন ও কনস্টেবল মো. মাসুম গাড়ির সামনে যান। তখন গাড়ির চালক হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ির গতি পুনরায় বাড়িয়ে দিয়ে এএসআই কাজী মো. সালাহউদ্দীন ও কনস্টেবল মাসুমকে ধাক্কা দেয়।

এতে কাজী মো. সালাউদ্দিন মাথায়, কোমরে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত পান। মো. মাসুমও রাস্তায় পড়ে গিয়ে ঘাড়ে, বুকে ও হাতে আঘাত পান। তখন চালক ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত গতিতে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আহত দুজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কাজী মো. সালাউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। আর মাসুমকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ওসি বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে আরেকটি টিম গাড়িটির পিছু নেয়। ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে বোর্ড স্কুল নামক স্থানে গাড়িটি রেখে চালক ও তার সঙ্গী পালিয়ে যায়।

পরে গাড়িটি তল্লাশি করে গাড়ির ভেতরে যাত্রীর সিটে স্যালাইনের ব্যাগে ও জারে রাখা মোট ৭৩০ লিটার দেশীয় তৈরি চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। গাড়িটি বর্তমানে থানা হেফাজতে আছে।

কেএম/এসএসএইচ