ক্ষোভ ঝাড়লেন গণমাধ্যমে
শহীদ ইয়ামিনের বাবার সঙ্গে ‘হ্যান্ডশেক’ করেননি পুলিশ কর্মকর্তা
জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানস্থলে পুলিশের এক কর্মকর্তার আচরণে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝেড়েছেন জুলাই আন্দোলনে নিহত হওয়া শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন।
তার অভিযোগ, সালাম জানিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি- কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা হাত মেলাতে অস্বীকার করেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সন্তানেরা কি এসব দেখার জন্য রক্ত দিয়েছে? একজন শহীদের বাবার সঙ্গে হাত মেলাতে যদি কারও কষ্ট হয়, তাহলে সেই সনদের মানবিকতা কোথায়?
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, পুলিশের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আমি (ইয়ামিনের বাবা) হাত দিয়েছি হ্যান্ডশেক করার জন্য। উনি হ্যান্ডশেক করেননি। উনি বললেন, ‘কোনো কথা শোনা হবে না, শুধু হ্যাঁ বা না বলতে হবে।’ আমি বললাম- আমার ছেলেরা রক্ত দিয়েছে এই দেশের জন্য, হ্যাঁ বা না বলার জন্য নয়। আমরা হ্যাঁ-না করার জন্য রক্ত দিইনি।
আবেগঘন কণ্ঠে তিনি বলেন, আমাদের দাবি একটাই- জুলাই সনদকে আইনি বাধ্যবাধকতা দিতে হবে। শহীদ আর আহত যোদ্ধাদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে হবে। এখনো দেশে অনেক বেয়াদব আছে- যারা চোখ তুলে কথা বলে, যারা আমাদের অপমান করে। তাদের যেন আর কখনও সেই সাহস না হয়।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শহীদ আর আহত যোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে হবে। অথচ প্রতিটি জায়গায় আমাদের অপমান করা হচ্ছে। যদি এই সনদের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকে, তাহলে এর মানে কী? আমি পড়েছি, এই সনদে নাকি বলা আছে- কোনো দল যদি এই সনদ না মানে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। তাহলে এই সনদ করে লাভ কী? যদি সংসদে গিয়েও এটা বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আমাদের লাভটা কোথায়?
তিনি আরও বলেন, সাহেবের (কমিশনারের) কাছে আমি সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়েছি- হ্যান্ডশেক করতে চেয়েছি। কিন্তু উনি হ্যান্ডশেক করেননি, উল্টো বলেছেন- কোনো কথা বলা যাবে না, শুধু হ্যাঁ বা না বলতে হবে। আমরা চাই, আমাদের সঙ্গে আলাপ হোক, শুনুক আমাদের কথা। সনদ ঘোষণার আগে এর আইনি বৈধতা নিশ্চিত করুক।
শহীদ ইয়ামিনের বাবার মতে, সনদ কেবল প্রতীকী কোনো নথি নয়, এটি বাস্তবায়ন না হলে শহীদদের আত্মত্যাগ অপমানিত হবে। আমাদের সন্তানরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। তাই আমরা চাই না তাদের স্মৃতি শুধু বক্তৃতায় বেঁচে থাকুক। সংসদে, আইনে, রাষ্ট্রে তারা বেঁচে থাকুক।
এর আগে শুক্রবার সকাল থেকে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ জুলাই যোদ্ধা ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদ ঘোষণার প্রতিবাদে অবস্থান নেন। পরে দুপুরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জুলাই যোদ্ধা পরিবারগুলোর অভিযোগ, সরকার বা ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সনদে আইনি স্বীকৃতি বা বাস্তবায়নের রোডম্যাপ স্পষ্ট করা হয়নি। তাদের দাবি- জুলাই সনদকে সংসদে গৃহীত আইনে পরিণত করতে হবে, না হলে এটা হবে শুধু একটি অবমাননাকর প্রতীক।
টিআই/এমএসএ