সিনোফার্মের ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার চায় চীনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা
চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তারা বলেন, চীনে উৎপাদিত ভ্যাকসিন না নিলে দেশটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সোমবার (২১ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, সরকার এক সময় দেশে এসে আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের চীনা ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বললেও এখন আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়নি। ফলে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আটকে থাকার পর আবারও চীনে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সরকারের কাছে তাদের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নিয়ে আসা হোক।
বিজ্ঞাপন
চীনে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেন বাদ দেওয়া হয়েছে জানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
মানববন্ধনে বাংলাদেশি ‘স্টুডেন্ট ইন চায়না’র সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী শীতকালীন অবকাশের সময় এবং পরবর্তীতে মহামারি ছড়িয়ে পড়লে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেশে ফিরে আসে। কিন্তু দেড় বছর কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত আমাদের ফিরে যাওয়া হয়নি এবং আমাদের ফিরে যাওয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এক সময় অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষার কারণে আমাদের চীনে যেতে হয়নি। অনলাইনে পাঠদান পর্যাপ্ত না হওয়ায় আমরা পড়ালেখায় অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এ অবস্থায় যদি পরবর্তী সেমিস্টারে চীনে যেতে না পারি, আমাদের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়বে। অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার সংকটে পড়বে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ইতোমধ্যে চীন সরকার দেশটিতে প্রবেশের শর্ত হিসেবে সে দেশের উৎপাদিত ভ্যাকসিন নিতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। চীনের উপহার দেওয়া ১১ লাখ টিকা থেকে চীনে ফেরতেচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।
তারা বলেন, দুই ধাপে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে চীনে ফেরত যেতে আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার পাবে ঘোষণা দেয়। তাদের নির্দেশনা মতে আমরা স্বেচ্ছায় চাইনিজ ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা পাঠিয়েছি। পরবর্তীতে চীনের ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার পাবে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে আমাদের নাম দেখতে না পাওয়ায় আমাদের অনেক আশাহত ও হতাশ হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের নিশ্চিত করে কেউ কিছুই বলছে না।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কখনোই এমনটা আশা করিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং এবং আমাদের মৌখিকভাবে আশ্বস্ত করেও এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেওয়া ও ভ্যাকসিন না দেওয়া আমাদের আশাহত ও বিস্মিত করেছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে চীনা ভ্যাকসিনসহ সাতটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। অক্সফোর্ড- অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজারসহ দেশে অন্যান্য ভ্যাকসিন থাকলেও আমরা তো অন্য কোনো ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার চাইনি। শুধুমাত্র চাইনিজ ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকার চেয়েছি। পাকিস্তান, নেপালসহ অন্যান্য দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও চায়নিজ অ্যাম্বাসি তাদের দেশের নাগরিক, ব্যবসায়ী, ছাত্রসহ যারা চীনে ফিরতে ইচ্ছুক তাদেরকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে এসেছে। আর সেখানে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য অধিদফতরের সরাসরি ঘোষণার পরও আমরা ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, যা আমাদের অত্যন্ত মানসিকভাবে হতাশ ও বিপর্যস্ত করেছে।
তারা বলেন, আমাদের জোর দাবি- ভ্যাকসিন মজুদ শেষ হওয়ার আগেই আমাদের ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন ও দ্রুত ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বর্তমানে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ ল্যাংগুয়েজ, প্রকৌশল, এমবিবিএস ও গবেষণার বিভিন্ন বিষয়ে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। একজন প্রকৌশল শিক্ষার্থীর জন্য তাত্ত্বিক পাঠদানের পাশাপাশি ল্যাবরেটরির কাজ, ব্যাবহারিক কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা শুধুমাত্র অনলাইনে দায়সারাভাবে দেওয়া হচ্ছে, যেটা আমাদের শেখার জন্য উপযুক্ত নয়। এতে করে আমাদের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশে শিক্ষিত বেকার তৈরি হবে।
তারা জানান, এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যাটা আরও বেশি প্রকট। ইন্টার্নশিপের সুযোগ না পাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী ডিগ্রি নিয়ে সংশয়ে আছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) জানিয়েছে, অনলাইনে ইন্টার্নশিপ গ্রহণ করবে না, যা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সমস্যা আরও প্রকট করেছে।
চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডিতে অনেকেই গবেষণা করছেন, এজন্য অনেকেই চাকরি ছেড়েছেন। কিন্তু তাদের মাসিক ভাত বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক সমস্যাসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তারা অনলাইনে গবেষণার কাজ নিয়মিত চালিয়ে যেতে পারছেন না। এভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস, গবেষণার কাজ ও ইন্টার্নশিপ সঠিকভাবে সম্পাদনের কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
চীনে ফিরতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি তুলে ধরা হয়- পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকারে রেখে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা। দীর্ঘ সাত মাস ধরে বন্ধ থাকা চীনে গমনেচ্ছু বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা পুনরায় চালু করা এবং চীনা অ্যাম্বাসি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী সেমিস্টারের মধ্যেই চীনে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
এনএম/এসএসএইচ