রাজধানীর গুলশানে একটি অভিজাত বারের বাউন্সার (বিশেষ নিরাপত্তাকর্মী) ও কর্মচারীদের মারধরে ব্যবসায়ী দবিরুল ইসলাম (৫১) নিহতের ঘটনায় সাতজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত আসামিদের রিমান্ডের আদেশ দেন। আদালতে গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক মোক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় প্রথমে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। পরে ভিকটিম মারা গেলে তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

এর আগে ঢাকা ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের সবার সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- শামীম আহমেদ, রাজু আহমেদ, তোফাজ্জেল হোসেন, মো. রাকিব, মো. কাউসার, রুবেল মাহমুদ ও প্লাবন মিয়া। এদের মধ্যে শামীম আহমেদ বারটির ব্যবস্থাপক এবং তোফাজ্জেল হোসেন গ্রাহক। বাকি পাঁচজন বারের বাউন্সার ও কর্মচারী।

গত ১৪ অক্টোবর রাতে গুলশান-১ নম্বরের ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ লিমিটেড বার ও রেস্টুরেন্টের সামনে দবিরুল ইসলাম নামের ওই ব্যবসায়ীর ওপর হামলা হয়। নিহত দবিরুলের স্ত্রী নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

মামলার এজাহারে বলা হয়, জমি কেনাবেচার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত দবিরুল ইসলাম ১৪ অক্টোবর রাত তিনটার দিকে কাজ শেষে গুলশান-১ নম্বরের প্লট ৫১–এ ব্লিস আর্ট লাউঞ্জ লিমিটেড রেস্টুরেন্টে যান। পরে পরিবারের সদস্যরা রাতে তার ফোন বন্ধ পান। পরদিন ভোরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে জানতে পারেন, তিনি গুলশান-১ নম্বরের একটি ভবনের পেছনের রাস্তায় পড়ে আছেন। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়।

একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বারের ব্যবস্থাপক শামীমের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছিলেন দবিরুল। একপর্যায়ে দবিরুল শামীমকে একটি থাপ্পড় দেন। পরে শামীম ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন মিলে দবিরুলকে মারধর করেন। দবিরুল মাটিতে পড়ে গেলে একজন তার মাথায় লাথি দেন। এর কিছুক্ষণ পর কয়েকজন মিলে দবিরুলকে সেখান থেকে তুলে পাশের একটি রাস্তায় ফেলে দেন।

এ বিষয়ে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গুলশান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বারের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা দবিরুল ইসলামকে মারধর করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে আমরা কাজ করছি। গত এক সপ্তাহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

বাউন্সার কারা?

বাউন্সার হলেন বার বা নাইট ক্লাবগুলোতে দায়িত্ব পালনকারী বিশেষ ধরনের নিরাপত্তাকর্মী। তারা সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বারের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখভাল করেন এবং গ্রাহকদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করেন। একটি বারে সাধারণত ৭-৮ জন থেকে শুরু করে ১৫-২০ জন বাউন্সার থাকেন।

এমএসি/এনআর/এমজে