রাষ্ট্রপতির জারি করা ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (আরপিও সংশোধন)-এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অভূতপূর্ব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সহিংসতা, কারচুপি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কমিশনকে আরও শক্তিশালী করাই এ সংশোধনের প্রধান লক্ষ্য ছিল।

এ সংশোধনের ফলে ইসির একক সিদ্ধান্তে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা সম্পূর্ণ আসনের নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে এবং ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

১. যখন-তখন নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা (Article 91):

নির্বাচনকালীন বিশৃঙ্খলা ও কারচুপির ক্ষেত্রে কমিশনকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন বাতিল (Stop Election) : যদি নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত হয় যে, জোর-জবরদস্তি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অন্যান্য দুর্নীতিমূলক কাজের (Malpractices) কারণে অথবা ‘অ্যাক্ট অব গড’ জনিত কারণে নির্বাচন সঠিকভাবে, ন্যায়সংগতভাবে ও আইন অনুযায়ী পরিচালনা করা সম্ভব নয়, তাহলে কমিশন নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে যেকোনো ভোটকেন্দ্রে অথবা সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন বন্ধ করার নির্দেশ দিতে পারবে।

ফলাফল স্থগিত ও পুনর্নির্বাচন (Withhold Result): যদি কমিশন কোনো উৎস থেকে পাওয়া তথ্যে বা অন্য কোনোভাবে নিশ্চিত হয় যে, জোর-জবরদস্তি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, কারসাজি (Manipulation) অথবা অন্য কোনো অনিয়মের কারণে কোনো ভোটকেন্দ্রের ফলাফল মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তবে কমিশন সেই কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশ স্থগিত করতে পারবে। দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে সেই কেন্দ্রের ফল প্রকাশ বা বাতিল করে পুনঃভোটের নির্দেশ দিতে পারবে।

২. সেনা মোতায়েন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিধি বৃদ্ধি (Article 2):

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’র সংজ্ঞায় সামরিক বাহিনীর সব শাখাকে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’ (Law Enforcement Agency) এর সংজ্ঞায় শুধু ‘কোস্ট গার্ড’ শব্দের পরিবর্তে কমা ও শব্দসমূহ প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে, যার ফলে এখন স্পষ্ট উল্লেখ আছে– বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড (Bangladesh Coast Guard), বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh Army), বাংলাদেশ নৌবাহিনী (Bangladesh Navy), বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (Bangladesh Air Force)।

৩. ভোট গণনায় গণমাধ্যম কর্মীদের (Media Personnel) সুযোগ (Article 36):

ভোট গণনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের যুক্ত করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। পূর্বে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার এজেন্ট এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের (Election Observers) ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকার সুযোগ ছিল। সংশোধনীতে ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকার জন্য ‘গণমাধ্যম কর্মী’ (Media Personnel) শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে।

৪. ইসির কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি:

নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কার্যপরিধি ও ক্ষমতা আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

ডিআইজিকে যুক্ত করা: নির্বাচন-সংক্রান্ত তদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে যুক্ত করা হয়েছে।

প্রিসাইডিং অফিসারের হাতে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা: প্রার্থী, প্রার্থীর এজেন্ট, রাজনৈতিক দলের নেতা বা প্রভাবশালী কেউ ভোটকেন্দ্রের নির্ধারিত সীমানার মধ্যে অপ্রয়োজনে ঘোরাঘুরি বা ভিড় করলে প্রিজাইডিং অফিসার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে সরিয়ে দিতে পারবে এবং প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করতে পারবে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি আরপিওর ৭৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হবেন।

সংসদ সদস্যের অযোগ্যতা সংক্রান্ত ইসির চূড়ান্ত ক্ষমতা (Article 12): নির্বাচনের পর কোনো সংসদ সদস্যের অযোগ্যতা নিয়ে কোনো বিরোধ সৃষ্টি হলে, নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে (Suo-moto) বা অন্য কোনোভাবে অবহিত হয়ে বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে পারবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

নতুন প্রার্থীর হলফনামা তদন্তের ক্ষমতা (Article 91F): সংসদ সদস্যের মেয়াদকালে (During the tenure of the parliament) যদি কমিশন জানতে পারে যে নির্বাচিত প্রার্থীর দাখিল করা হলফনামা বা আয়-ব্যয়ের বিবরণে কোনো গরমিল বা মিথ্যা তথ্য রয়েছে, তবে কমিশন তদন্তের নির্দেশ দিতে পারবে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে কমিশন লিখিত আদেশের মাধ্যমে সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বেআইনি ঘোষণা করে তার নির্বাচন বাতিল করে দিতে পারবে এবং নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে।

এসআর/এসএসএইচ