রাজধানীতে দিনের শুরুটা হয়েছে আষাঢ়ের বৃষ্টির সঙ্গে। বৃষ্টির তীব্রতা না থাকলেও টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কাজে বের হওয়া মানুষ। সেই সঙ্গে গণপরিবহনে উঠতে না পেরে শত শত মানুষকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সড়কে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, আরামবাগ, পুরান ঢাকার মাজেদ সরদার রোড, নাজিরা বাজার, সিক্কাটুলি, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, খিলক্ষেত, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়াসহ বিভিন্ন অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এসব এলাকার মানুষকে দ্বিগুণ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সকালে বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অফিসে যেতে বের হয়েছিলেন যাত্রাবাড়ী এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অফিসে যেতে বের হয়েছি। কিন্তু যাত্রাবাড়ীর কাঁচামাল আড়ৎ এলাকা, বড় মাদরাসা মোড়, বিবির বাগিচা গলি পুরোটাই জলাবদ্ধ। হাটু পানি মাড়িয়ে অফিসে যেতে হচ্ছে। সিটি করপোরেশন বলেছিল, এবার আর জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের। অন্যদিকে রাস্তায় শত শত মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু আগে থেকেই পরিপূর্ণ থাকায় বাসের গেট লাগিয়ে রাখা হচ্ছে, মাঝপথে কেউ বাসে উঠতে পারছেন না।

সাখাওয়াত হোসেন হোসেনের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে জলাবদ্ধতা। কোন পাপে যে রাজধানীতে থাকতে হচ্ছে। অলিগলির জলাবদ্ধতা পেরিয়ে যখন অফিসগামী মানুষ বড় সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন তারা বাসে উঠতে পারছে না। এদিকে অফিসের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এত সব ভোগান্তি নিয়ে রাজধানীতে বসবাস করা কঠিন। বারবার সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা হবে না বলে আশা দেখাচ্ছে, তবু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই আমরা।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ‍বৃষ্টির মধ্যেই শত শত মানুষকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। গণপরিবহনে উঠতে না পেরে এসব অফিসগামী মানুষ বৃষ্টি মাথায়, কেউ কেউ ছাতা মাথায় গণপরিবহনে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন।

রামপুরা থেকে খিলক্ষেত যেতে বাসে উঠতে চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন শফিকুর রহমান নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, অফিসে ঢোকার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, তবুও কোনো বাসে উঠতে পারছি না। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে বাসের গেট বন্ধ। এ কারণে শত শত মানুষ সকাল থেকে সড়কে ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

আষাঢ়ের বৃষ্টির সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গণপরিবহনে উঠতে না পারা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। যদিও বাস চালকরা যাত্রী না নেওয়ার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উত্তরা থেকে বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, বাসাবো হয়ে চলাচলকারী রাইদা বাসের চালক হেলাল উদ্দিন বলেন, দুই সিটে একজন যাত্রী আর ভাড়া ৬০ শতাংশ বেশি, তাই আগে থেকেই গাড়ি যাত্রীতে পরিপূর্ণ থাকছে বাস। যেহেতু যাত্রীকে ভাড়া বেশি গুনতে হচ্ছে, তাই তারা বাসের গেট বন্ধ করে রাখতে আমাদের বাধ্য করছে। যে কারণে মাঝ পথের যাত্রীদের আমরা বাসে তুলতে পারছি না। উত্তরা থেকে আবুল হোটেল, মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত আসার সময় শত শত যাত্রীকে সড়কে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি।

এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, আজ দিনভর রাজধানীতে বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। রাজধানীর বাইরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ বলেন, বর্ষকাল চলছে। তাই সকাল, বিকেল, দুপুর ও রাতে যেকোনো সময়ই বৃষ্টি দেখা দিতে পারে। আজ সকালে শুরু হওয়া বৃষ্টি দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে চলবে। দুপুরের পর একটু কমতে পারে। রোদের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। বলা যেতে পারে সারাদিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে।

এএসএস/এসএসএইচ