সরকারি তেলের টাকায় যমুনার কর্তাদের দশ মাসে দুই পিকনিক
সরকারি জ্বালানি তেল কোম্পানি যমুনা অয়েলের টাকায় মাত্র ১০ মাসে দুইবার পিকনিক সারছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে একবার কক্সবাজারে পিকনিক করেছিলেন তারা। শুক্রবার ও শনিবার (২১ ও ২২ নভেম্বর) আবারও একই গন্তব্যে পিকনিক আয়োজন হচ্ছে। এতে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধারণা করা হচ্ছে ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৭০০ টাকা।
যমুনা অয়েল কোম্পানি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যমুনা অয়েল এমপ্লয়িজ রিক্রিয়েশন ক্লাবের বার্ষিক অনুষ্ঠান ও পিকনিক ঘিরে ইতোমধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত ক্লাবটি সরকারি কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো পিকনিক করছে।
বিজ্ঞাপন
সূচি অনুযায়ী, ২১ ও ২২ নভেম্বর কক্সবাজারে দুই দিনব্যাপী ‘বনভোজন ও বিচিত্রানুষ্ঠান’ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে চলতি বছরের ১০ ও ১১ জানুয়ারি একই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা কক্সবাজারে পিকনিকে অংশ নেন। তখন ব্যয় হয়েছিল ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৯০০ টাকা।
এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সচিব শাহিনা সুলতানাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
বিজ্ঞাপন
বনভোজনের বার্ষিক বিচিত্রানুষ্ঠান উপকমিটির আহ্বায়ক উত্তম কুমার দাশের কাছে পিকনিকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরে তিনি বলেন, আমরা কক্সবাজারে পিকনিকে যাচ্ছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্লাবের কর্মকর্তারা জনগণের অর্থ ব্যক্তিগত বিনোদন ও ভ্রমণে ব্যবহার করছেন। নিয়ম অনুযায়ী বছরে একবার বার্ষিক উৎসব আয়োজনের অনুমতি থাকলেও ঘন ঘন এমন ট্যুর সরকারি অর্থের অপব্যবহারের শামিল। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ক্লাবের পক্ষ থেকে চারটি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সূচি অনুযায়ী, ২১ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটায় চট্টগ্রাম নগরের যমুনা ভবন থেকে পিকনিকের বহর রওনা হবে। কক্সবাজারের বিলাসবহুল সি ওয়ার্ল্ড হোটেল আগে থেকেই বুক করা হয়েছে। কোম্পানির চট্টগ্রাম অফিস ও টার্মিনাল বিভাগীয় অফিসের কর্মকর্তা, ক্লার্ক ও কর্মচারীরা (অস্থায়ী জনবলসহ) অংশ নিতে পারবেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনায় চারটি উপকমিটি করা হয়েছে— ৩০ জনের বার্ষিক বিচিত্রানুষ্ঠান উপকমিটি, হোটেলের সার্বিক দায়িত্ব উপকমিটি, বিচ ফুটবল পরিচালনা উপকমিটি এবং যানবাহন সার্বিক দায়িত্ব উপকমিটি।
এ বিষয়ে যমুনা অয়েল এমপ্লয়িজ রিক্রিয়েশন ক্লাবের সভাপতি হাসান ইমামকে ফোন করা হলে পিকনিকের প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি কল কেটে দেন।
কক্সবাজারের সি ওয়ার্ল্ড হোটেলের কর্মকর্তা তারেকুল ইসলাম জানান, যমুনা অয়েলের পক্ষ থেকে ১৬৭ জনের জন্য শুক্রবারের বুকিং দেওয়া হয়েছে।
মাত্র ১০ মাসে দুইবার কক্সবাজারে পিকনিক আয়োজনকে সরকারি টাকার অপচয় হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু সরকারি অর্থ তছরুপের সংস্কৃতি বদলায় না। তেল খাতে এই প্রবণতা আরও ভয়াবহ।
এমআর/এনএফ