ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে রাজধানীর কড়াইল বস্তি। ফায়ার সার্ভিসের ১৯ ইউনিট ৫ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে কড়াইল বস্তির। তবে এই আগুনে ইতিমধ্যে সর্বস্বান্ত হয়েছে শত শত পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আগুনে অন্তত পাঁচ শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, নানা কারণে ঘটনাস্থলে তাদের পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন আগুন ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। আগুন লাগার পরপর বস্তির বিভিন্ন ঘরে থাকা রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার একের পর এক বিস্ফোরিত হতে শুরু করে। ‌ এতে দ্রুত আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

আগুন ছড়ানো নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) আগুনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শুরুতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম ইউনিট পৌঁছাতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট লাগে। সরু রাস্তা, যানজট ও মানুষের ভিড়ের কারণে বড় গাড়িগুলো আগুনের কাছে পৌঁছাতে সময় নেয়।

এছাড়া ঘটনাস্থলে প্রচুর মানুষের ভিড়ের মধ্যে কিছু উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণেও আগুন নেভানোর কাজে বাধা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান পরিচালক। পাইপ কেটে ফেলা, জোড়া খুলে দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির মতো ঘটনাও ঘটেছে।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। এক ঘর থেকে এক ঘরে খুবই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে। আগুন লাগার ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর শুরু হয় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। কারণ এই বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দা রান্নার কাজে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন আরও তীব্রতা পায়। বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে এক একটি টিনের ঘর উড়ে যায়।

ভয়াবহ এ আগুনে কড়াইল বস্তির বাসিন্দা মো.রিপন তার ঘর যেমন হারিয়েছেন সঙ্গে হারিয়েছেন দোকানও। রিপন বলেন, “ফায়ার সার্ভিস বস্তিতে আসার আগে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমি তখন দোকানে ছিলাম আমার ফ্লেক্সিলোড সহ বিভিন্ন স্টেশনারি মালামালের দোকান। দোকান থেকে কোনমতে বের হয়ে বাসা থেকে পরিবারের লোকজনকে বের করি। তাদের বের করার পর আর ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি। একের পর এক সিলেন্ডার বিস্ফোরণে‌ চোখের সামনে উড়তে থাকে বস্তির ঘর। আমারও ঘর উড়ে গেছে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণে।  সঙ্গে পুড়ে গেছে আমার দোকানও। আমি এখন সর্বস্বান্ত। আমার যা মালামাল ছিল ঘরে পুড়ে ছাই, সঙ্গে দোকানে যা ছিল তাও পুড়ে ছাই। ‌ আমি এখন কিভাবে পরিবার চালাবো কিভাবে সবকিছু নতুন করে শুরু করব।”

এদিকে আক্ষেপ করে গৃহকর্মী হুসনা বেগম বলেন, ঘর থেকে একটা সুতাও নিয়ে বের হতে পারিনি। প্রথম যখন আগুনের কথা শুনেছি দ্রুত ঘর থেকে দৌড়ে বের হই। আমার একটি মেয়ে আছে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে ও ছেলেটি তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ঘর থেকে বের হয়ে আগে তাদেরকে খুঁজে বের করি। খুঁজে বের করার পর আবার ঘরে ঢুকতে চেয়েছিলাম মালামাল বের করার জন্য। কিন্তু আর ভিতরে যেতে পারিনি। আমি কি বলবো আমার মেয়ের আগামীকাল বার্ষিক পরীক্ষা তার একটা বই-খাতাও নিয়ে বের হতে পারিনি। ঘরের মধ্যে ফ্রিজ টিভি সহ যা কিছু ছিল সব কিছু পুড়ে ছাই।”

এমসি/এসএমডব্লিউ