ঢাকার ভূমিকম্প–অগ্নিকাণ্ড ঝুঁকি কমাতে কার্যকর পরিকল্পনা, জোনিং ও বিল্ডিং কোড মানার পাশাপাশি উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ভার্চুয়ালি আইপিডি আয়োজিত ‘ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যস্ত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ঢাকার পরিকল্পনাগত সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়।

অনুষ্ঠানে আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, চিলি-হাইতি-তুরস্কের ভূমিকম্পের উদাহরণগুলোই আমাদের স্পষ্ট দেখিয়ে দেয় ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে বিল্ডিং কোড অনুসরণের গুরুত্ব কতটুকু। আমাদের যে কোনো ভবন কিংবা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। ইমারত নির্মাণে সব পর্যায়ে দুর্নীতি মুক্ত করা যেমন রাষ্ট্রের দায়িত্ব, ঠিক তেমনি ভবন মালিক ও পেশাজীবীদের দায়বদ্ধ করতে হবে আমাদের।

বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম করিডোরে যেভাবে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বেড়েছে, দেশের অন্য এলাকায় সেভাবে বাড়ছে না। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে দেশের স্থানিক পরিকল্পনা তৈরি করে দেশের অন্য অঞ্চলগুলোতে উন্নয়ন ছড়িয়ে দিতে হবে। মুনাফাকেন্দ্রিক নগরায়ণ মডেল থেকে রাষ্ট্রকে বের হয়ে আসতে হবে।

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক ও আইপিডির রিসার্চ ফেলো কে এম আসিফ ইকবাল আকাশ বলেন, ঢাকাতে জনস্রোত না থামার অন্যতম কারণ অধিকাংশ বিভাগীয়, জেলা শহর ও প্রান্তিক জনপদে যথেষ্ট কর্ম ও মৌলিক চাহিদা পূরণের অপ্রতুলতা। জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ ঢাকাকে শুরু থেকেই বিকেন্দ্রীকরণ ও টেকসই উন্নয়নের ভেতর দিয়ে নিয়ে গেলে আজ তা মৃত্যু কূপে পরিণত হতো না। জলাশয় ভরাট করে নির্মিত উত্তরা দিয়াবাড়ি ৩য় প্রকল্পে মাইলস্টোন স্কুলের বিমান দুর্ঘটনা তারই সাক্ষ্য দেয়। ঢাকা যদি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় তার দায় যতটা নাগরিকের, তার ঠিক ততখানি সরকারেরও।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, ঢাকায় হোটেল–রেস্তোরাঁসহ বাণিজ্যিক এলাকা নির্ধারণে জোনিং যথাযথ অনুসরণ করা হয় না। ফলে অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্প ঝুঁকি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

একিউমেন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ তাহের বলেন, ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর কাঠামোগত, ইলেকট্রিক্যাল ও অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ক বিশদ প্রকৌশল নিরীক্ষা অবিলম্বে করা প্রয়োজন। ইটের বাড়িগুলোর মাঝারি থেকে বড় ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

শেলটেক কনসালট্যান্টের পুর প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ সজীব বলেন, ঢাকা শহরের জলাশয় জলাভূমি ভরাট করে গড়ে উঠা জোনের নরম ও দুর্বল মাটিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উন্নত ডিজাইন প্রটোকল অনুসরণ করতে হবে। মাটির লিকুইফিকশন ও অ্যামপ্লিফিকেশন বিবেচনায় নিয়ে ফাউন্ডেশন মজবুত করতে হবে।

আইপিডি গবেষণা সহকারী জিনিয়াস জান্নাত বলেন, এখন থেকে পরিকল্পনামাফিক নগর গড়তে পারলে ঢাকা শহরকে নিরাপদ করা সম্ভব। আইপিডির অপর গবেষণা সহকারী কাজী তাসনিয়া তাবাসসুম বলেন, শহরের পরিকল্পনা যেন ফাইলে বন্দি না থাকে, সেটা হলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইপিডির পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।

এএসএস/এমএন