করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টসহ কয়েকটি ধরন ছড়িয়ে পড়ায় মঙ্গলবার (২২ জুন) থেকে রাজধানীর আশপাশের সাতটি জেলায় কঠোর লকডাউন চলছে। বুধবার (৩০ জুন) মধ্যরাত পর্যন্ত সারাদেশ থেকে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন রাখতেই সরকারের এই পদক্ষেপ। তবে সরকার কঠোর লকডাউন দিলেও তার রেশ নেই মানুষের মধ্যে। লকডাউন মানতে দেখা যায়নি জনসাধারণকে। তারা চলাচল করছেন স্বাভাবিক নিয়মেই। পার্থক্য শুধু এই- লকডাউনে থাকা ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর পরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবু থেমে নেই মানুষের চলাচল। প্রাইভেটকারে বা হেঁটে ঢাকায় ঢুকছেন মানুষ।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর মিরপুর থেকে মাগুরা যাবেন মো. আবদুল ওয়াদুদ নামের একজন। গাবতলী পর্যন্ত বাসে চেপে এসেছেন। এরপর আমিনবাজার ব্রিজ পার হয়েছেন পায়ে হেঁটে। তারপর প্রাইভেটকারে যাবেন পাটুরিয়া ঘাটে। কোনোভাবে ঘাট পার হয়ে ভেঙে ভেঙে চলে যাবেন নিজ বাড়িতে। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই তিনি প্রতিবেদককে জানান, আমার যেতে কোনো সমস্যা হবে না।

সরকার লকডাউন দিয়েছে তারপরও বাড়িতে যাচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়িতে আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, পারিবারিক কাজ। সরকার তো গত একবছর ধরেই থেমে থেমে লকডাউন দিচ্ছে। সরকারের কথা শুনলে তো না খেয়ে থাকতে হবে। সরকার তাদের কাজ করছে, আর আমি আমার কাজ করছি।

সুনীল নামের আরেকজন পাবনা থেকে রাজধানীতে ফিরেছেন। আমিনবাজার ব্রিজে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাড়িতে যাওয়ার পরই সরকার লকডাউন দিয়ে দেয়। কিন্তু আমার আজ অফিসে উপস্থিত থাকতেই হবে। এজন্য বাড়ি থেকে ভোরে  রওনা হয়েছি। নদী পার হয়ে প্রাইভেটকারে এলাম। গাবতলী গিয়ে অফিসের বাস ধরব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গাবতলী ফাঁকা থাকলেও আমিনবাজার ব্রিজের উপর থেকে তীব্র যানজট। প্রাইভেটকার ও ট্রাকের জটে মানুষ পায়ে হেঁটেই আমিনবাজার পাড়ি দিচ্ছেন। অন্যদিকে ট্যাক্সি ও ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার যাত্রী পরিবহন করছে। প্রাইভেটকারগুলো সুযোগ বুঝে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

গাবতলীতে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাভার থেকে হাজার হাজার মানুষ আসছে। রাজধানী থেকেও হাজার হাজার মানুষ ওইদিকে যাচ্ছে। আমরা কোনো গাড়ি যেতে দিচ্ছি না। কিন্তু সাধারণ মানুষকে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, গাবতলীতে যানজট না থাকলেও এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে আমিনবাজারে যানজট লেগে আছে। জরুরি প্রয়োজনীয় গাড়িগুলো আমরা ছেড়ে দিচ্ছি।

সোমবার (২১ জুন) করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ঢাকার আশপাশের চারটিসহ সাতটি জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে। জেলাগুলোতে আগামী ৯ দিন জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের কার্যক্রম ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই ঢাকার সঙ্গে সারাদেশে দূরপাল্লার বাস ও সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রাজধানীতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন, শপিংমল খোলা রয়েছে।

এসআর/এসএসএইচ