জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন কোথায়?
গতকাল বৃষ্টি হয়েছে, সারাদিন জলাবদ্ধতা ছিল। আজও এলাকার কিছু কিছু অলি-গলিতে জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। নাগরিক ভোগান্তির এই দায় কার? জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের এত হাঁকডাক কোথায় গেলে? ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য তাদের জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন কোথায়?
ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর শনির আখড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল বৃষ্টি হয়েছে, সারাদিন জলাবদ্ধতার মধ্যে আমাদের কাটাতে হয়েছে। নাগরিকদের এমন দুর্ভোগ, আর সিটি করপোরেশন কী করে?
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিনের ভোগান্তির জমে থাকা ক্ষোভ প্রকাশ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, খাল-ড্রেন-জলাশয়ের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হলো। তারা বলেছিল দায়িত্ব পেলে সঠিকভাবে কাজ করবে এবং শহরে আর জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ তাদের কার্যক্রম। বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকাসহ অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে তারা জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন কিনেছিল, এই মেশিন দিয়ে নাকি পুরো ড্রেন পরিষ্কার হয়ে যায়, জলাবদ্ধতা আর হয় না। কিন্তু গতকালের (মঙ্গলবার) বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত (বুধবার) জলাবদ্ধতা রয়েই গেছে। তাহলে তাদের জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন কোথায় গেল, কেন তারা এটা ব্যবহার করে আমাদের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিচ্ছে না?
একই এলাকার বাসিন্দা এবং বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত তিন দিন ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মেরাজনগর, জুরাইন, পূর্ব রসুলবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নিয়মিত এই এলাকার মানুষকে জলাবদ্ধতার সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আশপাশের এলাকায় গত তিন দিন ধরে জলাবদ্ধতা আছে। এদিকে সিটি করপোরেশন ওয়াসার কাছ থেকে খালগুলোর দায়িত্ব নিলেও সংস্কার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। জলবদ্ধতায় মানুষ এত কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু সিটি করপোরেশনের কোনো উদ্যোগ নেই।
বিজ্ঞাপন
জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য, ড্রেনকে পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার করার জন্য সিটি করপোরেশন কোটি কোটি টাকা খরচ করে জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন কিনেছে। সে সময় তারা খুব গল্প দিয়েছে এই মেশিন দিয়ে পুরো ড্রেন পরিষ্কার করা যাবে, কিন্তু তাদের সেই মেশিন কই? এটা ব্যবহার করলেও তো এলাকাবাসী জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পায়, আক্ষেপ করে বলেন তিনি।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতালি থেকে অত্যাধুনিক ৩টি মেশিন কিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ‘জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন’ নামের এই যন্ত্র দিয়ে প্রতি ১০ মিনিটে ১২০ মিটার দীর্ঘ ড্রেন সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা যায়। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে মুহূর্তেই ড্রেনের ভেতরে থাকা সব ময়লা-আবর্জনা, পানি টেনে নিয়ে আসতে পারে। পুরো মেশিনটি পরিচালনা করতে তিনজন লোক প্রয়োজন হয়।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন ও পয়ঃনিষ্কাশন লাইন পরিষ্কারে অত্যাধুনিক জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন ব্যবহার বিষয়ে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিননের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের তিনটি এ মেশিন রয়েছে। প্রতিদিনই কাজ করা হয় এগুলো দিয়ে। মেশিনগুলো বসে নেই, নিয়মিত এসব দিয়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন দিন বিভিন্ন এলাকায় এই মেশিনের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে সব এলাকাতেই এটি ব্যবহার করা হবে। তবে খালগুলো পরিষ্কার না থাকায় এ মেশিন দিয়ে কাজ করতেও বাধা পেতে হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ইতালি থেকে আনা ১৫ টন ওজনের অত্যাধুনিক জেট অ্যান্ড সাকার মেশিনগুলোতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ড্রেন থেকে যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা টেনে নিয়ে পানি আলাদা করে সেই পানি ড্রেনে ছেড়ে দেবে। এ যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ড্রেনের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনা সক্ষম। যন্ত্রটিতে ২টি চেম্বার রয়েছে। একটি ৯ টন ধারণ ক্ষমতার স্লাশ চেম্বার এবং অন্যটি ৬ টন ধারণ ক্ষমতার পানি চেম্বার। ড্রেনের আর্বজনা জেট গতিতে পানি দিয়ে আঘাত করে পরে শক্ত আবর্জনা কেটে স্লাশ চেম্বারে জমা করবে। এরপর শক্ত হয়ে যাওয়া আর্বজনা মেশিনে সংযোজিত ড্রিল দিয়ে গুড়া করে এয়ার ভ্যাকুয়ামের মাধ্যমে স্লাশ চেম্বারে জমা হবে।
এদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে বুধবার (২৩ জুন) মালিবাগ এলাকায় নর্দমা পরিষ্কারকরণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এসময় তিনি জলাবদ্ধতা বিষয়ে বলেন, নর্দমাগুলোর নকশা যেভাবে করা হয়েছে, তাতে ঢাকায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, সে ধারণক্ষমতা ড্রেনগুলোর নেই। সুতরাং আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম হাতে নিতে হবে, বন্দোবস্ত করতে হবে এবং মূল নর্দমা, নালা, প্রশাখা সবগুলো নতুনভাবে নকশা করতে হবে।
এএসএস/জেডএস