চা-শিল্পে ১১৭ টাকা ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ বাতিল করে বর্তমান বাজারদর বিবেচনায় ৬৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ। সংগঠনটি বলছে, চা-শিল্পের ১৬৭ বছরের ইতিহাসে শ্রমিকদের মজুরি ১৬৭ টাকা হয়নি। অথচ শ্রমিকদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে চা-উৎপাদনে বাংলাদেশ ৯ম স্থানে উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাবিবউল্লা বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাকালে বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকরা ছুটি এবং নানা রকম প্রণোদনা পেলেও চা-শ্রমিক উৎপাদনে সক্রিয় থাকায় ২০২০ সালেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা উৎপাদন বেশি হয়। অথচ সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড ১১ বছরের বেশি সময় পর গত ১৩ জুন চা-বাগান শিল্প সেক্টরে শ্রমিকদের জন্য ‘এ’ ক্লাস বাগানে দৈনিক ১২০ টাকা, ‘বি’ ও ‘সি’ ক্লাস বাগানে যথাক্রমে ১১৮ টাকা ও ১১৭ টাকা মজুরির প্রস্তাব করে বিভিন্ন সুপারিশ গেজেট আকারে প্রকাশ করেন। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ঘোষিত ৪৩টি সেক্টরে এবং মজুরি কমিশন ঘোষিত রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প সেক্টরের মজুরির সঙ্গে তুলনা করলে চা-শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। মজুরি বোর্ড তাদের সুপারিশে চা-শিল্পের প্রচলিত প্রথা দ্বি-বার্ষিক চুক্তিকে আগামীতে ত্রি-বার্ষিক করার সুপারিশ করেছে। বিস্ময়কর বিষয় যে, ঠিকা শ্রমিকরা যেখানে বর্তমানে ১২০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন সেখানে মজুরি বোর্ড প্রস্তাব করেছে ১১০ টাকা। বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ এর ৫৮ ধারায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের কথা বলা হলেও মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের পানীয় জলের জন্য কুয়ার ব্যবস্থা, শ্রমআইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকভাবে গ্র্যাচুইটি ও কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে শ্রমিকদের বঞ্চিত করার মতো সুপারিশও করেছে।

আরও বলা হয়, একজন শ্রমিকের দৈনিক পরিশ্রমের পর পরবর্তি দিন কাজে যোগদানের জন্য শক্তি সঞ্চয়ের প্রয়োজনে দৈনিক তিন বেলা অতি সাধারণভাবে আহারের জন্য ১০০ (২০+৪০+৪০) টাকা দিলেও পেট ভরে না। তাই, স্ত্রী-পুত্র কন্যাসহ মা-বাবাকে নিয়ে ৬ সদস্যের এক পরিবারের জন্য দৈনিক ন্যূনতম ৬০০ টাকা দরকার। এর সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচযুক্ত করলে মাসিক ২০ হাজার টাকা ছাড়া কোনভাবেই বর্তমান অগ্নিমূল্যের বাজারে চলা সম্ভব নয়। প্রতিবেশি দেশগুলোর চা-শ্রমিকদের মজুরির সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের দেশের চা-শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। প্রতিবেশি ভারত, শ্রীলঙ্কায়, নেপালসহ শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশ চীন ও কেনিয়ার চেয়ে আমাদের দেশের চা-শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। অথচ আমাদের দেশের সরকার কথায় কথায় উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বলে থাকেন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকে প্রতিবেশিদের থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে।

বিজ্ঞপ্তিতে দাবি জানিয়ে বলা হয়, সরকারি তথ্য মতে দেশে রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। সেখানে চা-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ আয় মাসিক ৩ হাজার ৬০০ টাকা হিসেবে বার্ষিক মাত্র ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। এ অবস্থায় সরকার গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে ৬/৭ জনের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য দৈনিক ৬৭০ টাকা মজুরি, চা-শিল্পে নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন) কার্যকর ও অর্জিত ছুটি দিতে বৈষম্য ও শ্রম আইনের বৈষম্য নিরসন, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়ন এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মজুরি ও উৎসব বোনাস দিতে সব অনিয়ম বন্ধ করে শ্রমআইন মোতাবেক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক দেওয়া এবং ৯০ দিন কাজ করলেই সব শ্রমিককে স্থায়ী করার বিষয় যুক্ত করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ২৭ জুন বেলা ১১টায় মজুরি বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ ও সংগঠনের পক্ষে থেকে মজুরি বোর্ডের কাছে প্রস্তাব পেশ করার কর্মসূচি পালিত হবে।

এমএইচএন/এসএম