অগ্নিদুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে গঠিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’র সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার এই তথ্য জানান।

তিনি জানান, বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সেমিনারে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলী, স্থপতি, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারের উদ্বোধন করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। এরপর বিষয়ভিত্তিক কীনোট পেপার উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

পরে মহাপরিচালক সেমিনারের মূল আলোচনার সঞ্চালনা করেন। তিনি ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান সক্ষমতা, ভূমিকম্প মোকাবিলায় গ্রহণকৃত পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাড়তি ঝুঁকি, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা এবং উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত আহ্বান করেন।

সেমিনারে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন— বাংলাদেশের তুলনায় এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও জনবল কম। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনায় নতুন ফায়ার স্টেশন স্থাপন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরি। ওয়াসার সব পাম্প স্টেশনে ফায়ার ব্রিগেড কানেকশন স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়। ভূমিকম্পে সরকারি অফিস ভবনগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সকল ফায়ার স্টেশনকে ভূমিকম্প-সহনীয় করে গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। শহরে জায়গার সংকট থাকলে সরকারি ভবনের নিচতলার দুই তলা ফায়ার স্টেশন হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। ভলান্টিয়ার সংখ্যা বাড়ানো, নিয়মিত রিফ্রেশার কোর্স, মক এক্সারসাইজ, ফায়ার একাডেমি নির্মাণ এবং মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা জোরদারের সুপারিশ করা হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্যোগবিষয়ক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও সহশিক্ষা কর্মসূচিতে নম্বর সংযুক্ত করার প্রস্তাব উঠে আসে। আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর এবং নিয়মিত মহড়া ও প্রশিক্ষণ চালু রাখার আহ্বান করা হয়।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন— প্রফেসর ড. মাকসুদ হেলালী, ভাইস-চ্যান্সেলর, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়; প্রফেসর ড. জিল্লুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ; স্থপতি ইকবাল হাবিব, সহসভাপতি, সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন; ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মেদ খান; হারুন উর রশীদ, নির্বাহী সম্পাদক, একুশে টিভি; বুয়েটের প্রফেসর ড. মেহেদী আনসারী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. আব্দুস সালাম;
মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ (অব.), সাবেক পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স); এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোছা. ফুয়ারা খাতুনসহ ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা, স্থপতি ও প্রকৌশলীরা।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালকরা এবং বিভাগীয় উপপরিচালক ও জেলা কর্মকর্তা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

সভায় ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ, গবেষণা ও নীতিমালা প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

মহাপরিচালক বলেন, এই প্যানেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, তথ্যভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।

এসএএ/বিআরইউ