রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ট্রাফিক আইন অমান্য করায় একটি কালো রঙের প্রাইভেটকার আটকে দেন ডিএমপি ট্রাফিকের রমনা বিভাগ ও রমনা জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) তরিকুল আলম সুমন। আটকানোর পর চালকের কাছে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চান তিনি। তখন টিআইকে চালক উত্তর দেয়, গাড়িতে সংসদ সদস্যের (এমপি) স্টিকার লাগানো আছে, ভেতরে এমপির চাচাতো ভাই বসে আছে, কাগজ লাগবে না।

তখন টিআই তারিকুল আলম সুমন গাড়ি ছাড়বেন না জানানোর পর চালক কাগজপত্র তার হাতে দেয়। কাগজ হাতে পেয়ে টিআই দেখেন, গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স-টোকেনের মেয়াদ নেই। ড্রাইভারেরও লাইসেন্স নেই। তখন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা চালককে বলেন, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই এবং এমপির গাড়ি না হওয়া সত্ত্বেও স্টিকার লাগানোর অপরাধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তখন গাড়িতে থাকা ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে কুষ্টিয়ার এক এমপির চাচাতো ভাই হিসেবে পরিচয় দেন। ফারুক হোসেন ফোন করে মোবাইলটি ট্রাফিক পুলিশের ওই কর্মকর্তার হাতে ধরিয়ে দেন। পরে এমপির এপিএস পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ফোনে টিআই তারিকুলকে বলেন, গাড়িতে বসে থাকা ফারুক হোসেন এমপির চাচাতো ভাই। এমপির এপিএস গাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য টিআইকে নির্দেশ দেন।

কিন্তু এপিএসের কথায় কান না দিয়ে টিআই তারিকুল তাকে বলেন, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই। এছাড়া অবৈধভাবে গাড়িতে এমপির স্টিকার লাগানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধভাবে এই গাড়িতে এমপির স্টিকার যিনি লাগাতে দিয়েছেন তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিআইয়ের এমন কথা শোনে এপিএস পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ফোন রেখে দেন। পরে টিআই তারিকুল আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে গাড়িটি ডাম্পিংয়ে এ পাঠিয়ে দেন।

এ বিষয়ে সন্ধ্যার দিকে টিআই তারিকুল তার ফেসবুক আইডি থেকে জনসচেতনতার জন্য পোস্ট দেন। কিন্তু তার পোস্ট ফেসবুক থেকে বার বার ডিলিট করে দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাতে টিআই তারিকুল আলম ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলেন।

তারিকুল আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইল সিগন্যালে এ ঘটনা ঘটে। আইন প্রক্রিয়া শেষে এ বিষয়ে ফেসবুকে আমি একটি পোস্ট করি। কিন্তু আমার পোস্ট কীভাবে যেন ডিলিট হয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে এক ঘণ্টায় এ বিষয়ে চার বার পোস্ট দিয়েছিলাম। প্রতিবারই আমার পোস্ট ফেসবুক থেকে ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। এর মানে আমি বুঝতে পারছি না। আবারো পঞ্চমবারের মতো দিলাম দেখি কতক্ষণ থাকে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম পোস্ট দিয়েছিলাম গাড়ির ডকুমেন্টসহ। সেটা কীভাবে জানি ফেসবুক থেকে কে বা কারা ডিলিট করে দিয়েছে। দ্বিতীয় বার ডকুমেন্টগুলো সরিয়ে এ বিষয়ে আরেকটি পোস্ট দেই, সেটিও ডিলিট করে দেওয়া হলো। তৃতীয়বার গাড়ির নাম্বার ব্লার করে আরেকটি পোস্ট দেই সেটিও ডিলিট করে দেওয়া হয়। চতুর্থ বার গাড়িতে থাকা সংসদ সদস্যের স্টিকারের ছবিসহ আরেকটি পোস্ট দেই। ঐ পোস্টও ডিলিট করা হলো। ফেসবুকে ট্রাফিক অ্যালার্ট নামে একটি গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলাম তারাও আমার পোস্ট অ্যাপ্রুভ করেনি।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার পোস্টগুলো বারবার ডিলিট করে ফেসবুক থেকে ম্যাসেজ এসেছে আমি নাকি ফেসবুকের কমিউনিটি আইন ভঙ্গ করেছি। আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, আবার পোস্ট দিলে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হবে। আমি বুঝতে পারছি না কোনো আইনে অপরাধ করেছি!’

টিআই তারিকুল বলেন, ‘বিভিন্ন সময় অভিযোগ করা হয় আইন সবার ওপর সমানভাবে প্রয়োগ হয় না। এই পোস্টের মাধ্যমে আমি জানাতে চেয়েছিলাম আইন সবার জন্য সমান। পুলিশ ক্ষমতাবানদেরও আইনের আওতায় আনে সেটি পোস্টের মাধ্যমে জানাতে চেয়েছিলাম। আমার পোস্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য বাহবা পাওয়া নয়, বরং সম্মানিত এমপিদের স্টিকার অবৈধভাবে গাড়িতে লাগিয়ে যারা চলাফেরা করছে তারা যেন সাবধান হয়ে যায়।’ 

ফেসবুক পোস্টে যা লিখেছেন তারিকুল

‌‘এই পোস্টটি আমি গত এক ঘণ্টা মধ্যে চারবার দিলাম! প্রতিবারই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা ডিলিট করে দেয়, রুলস অমান্য করার অপরাধে! আমি নিজেও বুঝতেছি না, কোথায় রুলস অমান্য হলো! তাই, ৫ম বারের মতো আবারো দিলাম, দেখি কতক্ষণ টিকে!
#####

গাড়ির সামনে জাতীয় সংসদের স্টিকার, সংসদ সদস্যের গাড়ি, তাও আবার সরকারি দলের! কাগজ তো দেখাবেই না, বরং কাগজ চাওয়াতে বিরাট অপরাধ করে ফেললাম মনে হয়! আমিও নাছোড়বান্দা, শেষ পর্যন্ত কাগজ দিতে বাধ্য হলো! ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ নেই, ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই! এইবার যায় কোথায়, আমিও পেয়ে বসলাম! শেষে এমপি মহোদয়ের এপিএসকে ফোনে ধরিয়ে দিলেন!

এপিএস এর কাছে যখন জানতে পারলাম, এটা এমপি মহোদয়ের ভাইয়ের গাড়ি! এপিএসকে তখন বললাম, একজন এমপি মহোদয় শুধুমাত্র নিজের ব্যবহারের গাড়িতে একটিমাত্র স্টিকার ব্যবহার করতে পারেন, উনার ভাইতো এই স্টিকার পাওয়ার কথা না! যিনি এই স্টিকার প্রদান করেছেন, উনার বিরুদ্ধেও মামলা হবে, আর গাড়ির কাগজ ফেল থাকায় গাড়িটি ডাম্পিং-এ যাবে! তখন এপিএস সাহেব ফোনের লাইন কেটে দিলেন! আমিও বেরসিকের মতো রেকার ডেকে আইনগত ব্যবস্হা নিলাম!

এই গাড়িগুলো সব জায়গায় মনেহয় ঠিকমতো চেক হয়না বিধায়, স্টিকারের এতো অপব্যবহার! তবে, দেশের অন্য কোথাও চেক হোক বা না হোক, রমনা ট্রাফিক জোনে গত পাঁচ বছর যাবৎ নিয়মিত চেকিং এর কারণে অহরহ ব্যবস্হা নেয়া হচ্ছে! কয়দিন আগেও মগবাজার ক্রসিং-এ এরকম একটা কেইস ধরা পড়েছিলো এবং রমনা থানায় নিয়মিত মামলাও রুজু করা হয়েছিলো!
টিম রমনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ, এরকম ব্যতিক্রম কার্যক্রমের জন্য!❤️❤️❤️’

এমএসি/ওএফ