বড় স্বপ্ন আর মানুষ হওয়ার আশা নিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকার তেজগাঁও কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন ছেলে সাকিবুল হাসান রানাকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে ছাত্রাবাসের সহিংসতা। ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাকিব।

সন্তানের এমন পরিণতিতে বাকরুদ্ধ বাবা আলী হোসেন বলছেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। বড় আশা নিয়ে যে সন্তানকে ঢাকা পাঠিয়েছিলাম, সে আজ ফিরেছে নিথর লাশ হয়ে। এখন সে হয়ে গেছে দেওয়ালের পোস্টার। আমি ছেলের হত্যার সঠিক বিচার ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সাকিব হত্যার বিচারের দাবিতে সহপাঠীদের বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আলী হোসেনের দাবি, ছাত্রাবাসের সিসিটিভি ক্যামেরায় স্পষ্ট ফুটেজ থাকলেও এখনো তার ছেলের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্তকে কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।

তিনি বলেন, পুলিশের কাছে ক্যামেরার ছবি থাকতেও আমার ছেলের হত্যার তদন্ত কেন হচ্ছে না? বিচার কেন হচ্ছে না? আসামিরা এখনো বাইরে কেন? এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর পাচ্ছি না। আমার একটাই দাবি। সেটি হচ্ছে ছেলের হত্যার সঠিক বিচার এবং দোষীদের ফাঁসি।

নিহত সাকিবুলের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না বলে দাবি করে তাদর বাবা বলেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে একজন গ্রামের ছেলে। অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি। একটু ভালো ছাত্র ছিল বলে মানুষ হওয়ার আশায় ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। আজ আমার ছেলে মানুষ তো হলো না, দেওয়ালে পোস্টার হয়ে গেছে।

ছেলের হত্যার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, কেন আমার ছেলেকে খুন করা হলো, আমি জানি না। আমি তো কাউকে চিনি না। কলেজের ছাত্ররা হয়ত চিনবে। আমার ছেলে হারানোর ব্যথা আমি জানি।

আলী হোসেন বলেন, আমি প্রশাসনের কাছে কোনো বিশেষ সুবিধা চাই না। শুধু আমার ছেলের সঠিক বিচার চাই। আমার ছেলে যখন নাই, তখন ওর খুনিরাও যেন দুনিয়াতে বেঁচে না থাকে, এটাই আমার দাবি।

অন্যদিকে সহপাঠী হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাকিবুলের সহপাঠীরা। তারা বলছেন, দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে আন্দোলন থেকে পিছু হটবেন না।

সাকিবুলের সহপাঠী সাইফুর রহমান বলেন, সাকিব আমাদেরই একজন ছিল। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ছাত্রাবাসে প্রকাশ্যে হামলার শিকার হয়ে তার মৃত্যু হলো। অথচ এখনো আমরা কোনো কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি না। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

ফারহান আহমেদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, একজন সাধারণ শিক্ষার্থী এভাবে প্রাণ হারাবে, আর আমরা চুপ করে থাকব তা হতে পারে না। সাকিবুল হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

এর আগে, গত ৬ ডিসেম্বর রাতে তেজগাঁও কলেজের ছাত্রাবাসে মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র সাকিবুল হাসান রানা গুরুতর আহত হন। পরে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। চার দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর ১০ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

আরএইচটি/এমএন