বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীদের আজ (শনিবার) থেকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ঢাকা-কক্সবাজারসহ নির্দিষ্ট ছয়টি রুটে ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু ব্যবহারের মাশুল বা ‘পন্টেজ চার্জ’ আরোপের মাধ্যমে এই ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর হয়েছে।

এতে আসনভেদে ট্রেনের ভাড়া বেড়েছে সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২২৬ টাকা পর্যন্ত। গত ১৩ বছরের মধ্যে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বাড়ল ট্রেনের ভাড়া।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এবার সরাসরি টিকিটের মূল ভাড়া না বাড়িয়ে মূলত সেতু ব্যবহারের অতিরিক্ত মাশুল যুক্ত করা হয়েছে। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, রেলপথে ১০০ মিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু থাকলে দূরত্ব গণনার ক্ষেত্রে সেটিকে আড়াই কিলোমিটার হিসেবে ধরা হয়, যাকে বলা হয় ‘পন্টেজ চার্জ’। এই নিয়মের কারণে কাগজে-কলমে গন্তব্যের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় টিকিটের দামও বেড়েছে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৬টি রুটের মোট ১১টি সেতুর ওপর এই মাশুল আরোপ করা হয়েছে। রুটগুলো হলো—ঢাকা–চট্টগ্রাম, ঢাকা–কক্সবাজার, ঢাকা–সিলেট, চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–জামালপুর ও ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ।

এর আগে গত ২৫ মে আয় বৃদ্ধি ও ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এক বৈঠকে টিকিটের দাম না বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর ১৩টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর অন্যতম ছিল ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতুতে পন্টেজ চার্জ আরোপ। সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এই ভাড়া বৃদ্ধি চূড়ান্ত করা হলো।

ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির অতীত চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২ সালে একবারে ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৬ সালে কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া ৩৬ পয়সা থেকে বেড়ে হয় ৩৯ পয়সা। ২০২২ সালে নন-এসি প্রথম শ্রেণির টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়। ২০২৪ সালে অতিরিক্ত কোচের টিকিটে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া এবং একই বছরের মে মাসে দূরপাল্লার রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়।

ভাড়া বৃদ্ধির ফলে ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া ২০১২ সালের ৫৮৫ টাকা থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ৯৪৩ টাকা। একই ট্রেনের শোভন চেয়ারের ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৪৯৫ টাকায়। এই রুটে পন্টেজ চার্জের কারণে দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮১ কিলোমিটার।

একইভাবে ঢাকা–কক্সবাজার রুটে স্নিগ্ধা আসনের ভাড়া বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৪৯ টাকা, এসি সিট ১ হাজার ৭৪০ টাকা এবং এসি বার্থ ২ হাজার ৬৫৬ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা–সিলেট, চট্টগ্রাম–সিলেট, চট্টগ্রাম–জামালপুর ও ঢাকা–দেওয়ানগঞ্জ রুটেও বিভিন্ন শ্রেণির টিকিটে বাড়তি ভাড়া কার্যকর হয়েছে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, সব রুটে নয়, নির্দিষ্ট কিছু রুটে সীমিত পরিসরে ভাড়া বেড়েছে এবং তা মূলত পুরোনো সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য।

তবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, বারবার নানা কৌশলে ভাড়া বাড়ানো অযৌক্তিক। আয় বাড়াতে রেলের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করলেই যথেষ্ট।

এমএইচএন/বিআরইউ