কেন ২৫ ডিসেম্বরই বড়দিন পালন করা হয়?
প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে ধুমধাম করে পালিত হয় যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন বা বড়দিন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, বাইবেলের কোথাও যিশুর জন্মের সুনির্দিষ্ট তারিখের উল্লেখ নেই। এমনকি শুরুর দিকের খ্রিস্টানরা যিশুর জন্মদিন পালনও করতেন না। তবে কেন ২৫ ডিসেম্বরকেই বেছে নেওয়া হলো এই মহান উৎসবের জন্য?
এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, প্রাচীন রোমান ঐতিহ্য এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক দারুণ মেলবন্ধন।
বিজ্ঞাপন
কেন ২৫ ডিসেম্বর? ইতিহাসের রহস্য ও তাৎপর্য
২৫ ডিসেম্বরকে বড়দিন হিসেবে পালনের সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ ইতিহাসবিদরা উল্লেখ করেন:
বিজ্ঞাপন
১. প্রাচীন রোমান উৎসব ‘সাটারনালিয়া’ ও ‘সল ইনভিক্টাস’
প্রাচীন রোমে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে ‘সাটারনালিয়া’ নামক এক বিশাল উৎসব পালিত হতো। এছাড়া ২৫ ডিসেম্বর ছিল রোমানদের সূর্যদেবতা বা ‘সল ইনভিক্টাস’-এর জন্মদিন। সেই সময় রোমানরা বিশ্বাস করত যে, এই দিন থেকে সূর্যের তেজ বাড়তে শুরু করে। চতুর্থ শতাব্দীতে যখন খ্রিস্টধর্ম রোমে রাজধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে, তখন পোপ জুলিয়াস এই জনপ্রিয় প্যাগান উৎসবগুলোর পরিবর্তে খ্রিস্টধর্মীয় উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেন যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই তা গ্রহণ করতে পারে।
২. পোপ জুলিয়াস ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান ক্যালেন্ডারে প্রথম ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন হিসেবে পালনের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে পোপ জুলিয়াস আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ডিসেম্বরকে যিশু খ্রিস্টের জন্ম দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। মনে করা হয়, প্যাগান সংস্কৃতি থেকে খ্রিস্টধর্মে রূপান্তরের প্রক্রিয়া সহজ করতেই এই তারিখটি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।
৩. শীতকালীন অয়নকাল বা উইন্টার সলস্টাইস
উত্তর গোলার্ধে ২১ বা ২২ ডিসেম্বর বছরের সবচেয়ে ছোট দিন এবং দীর্ঘতম রাত হয়। ২৫ ডিসেম্বর থেকে দিন বড় হতে শুরু করে। খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদরা যিশুকে ‘বিশ্বের আলো’ হিসেবে গণ্য করেন। অন্ধকার কাটিয়ে আলোর ফিরে আসাকে যিশুর আগমনের সঙ্গে তুলনা করতেই এই সময়টিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
৪. মেষপালকদের তত্ত্ব ও বিতর্ক
বাইবেলে উল্লেখ আছে, যিশুর জন্মের সময় মেষপালকরা খোলা আকাশের নিচে ভেড়া চড়াচ্ছিলেন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, ফিলিস্তিনের হাড়কাঁপানো ডিসেম্বরের ঠান্ডায় খোলা মাঠে মেষ চড়ানো সম্ভব নয়। তাই অনেকে মনে করেন যিশু জন্মেছিলেন বসন্তে। তবে ২৫ ডিসেম্বরের প্রথাটি এতই প্রাচীন এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে আজ এটিই বিশ্বজনীন স্বীকৃত তারিখ।
২৫ ডিসেম্বর যিশুর প্রকৃত জন্মদিন কি না, তা নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক থাকলেও এর তাৎপর্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই দিনটি এখন কেবল একটি ধর্মের উৎসব নয়, বরং এটি সারা বিশ্বে শান্তি, ক্ষমা এবং আনন্দের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যিশুর বাণীর মতোই—অন্ধকার দূর করে আলোর দিকে এগিয়ে যাওয়াই এই দিনটির মূল শিক্ষা।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
এসএম