মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ৭ জন নিহত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।  

তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলে আমরা যেটা জেনেছি, এখানে যে সরমা হাউজ ছিল। মূলত সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে খুব সম্ভবত গ্যাস জমেছিল এবং এই গ্যাস বিস্ফোরণের কারণে আশেপাশের সাতটা বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুইটা বাস বিধ্বস্তের মতো হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা সাতজন মারা গেছে বলে খবর পেয়েছি।’

এ ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেখানে পুলিশের প্রতিনিধি চাইলে আমরা দেব। তবে এ বিষয়ে এক্সপার্ট ফায়ার সার্ভিস। তারাই তদন্ত করবেন, তারাই মতামত দেবেন।

এ ধরনের সরমা হাউজের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশের ভূমিকা কী, তদারকির বিষয়টি তো পুলিশের ওপর বর্তায়— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে এখানে দায় তো আমাদের না। গ্যাসের সংযোগটা বৈধভাবে নেওয়া হয়েছে কি না, গ্যাসের লাইনটা সাইনটিফিক্যালি লিক-প্রুফ ছিল কি না, সেটার এক্সপার্ট তো আমি না। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে। তারা এটা দেখভাল করবে। এরপর ব্যবস্থা গ্রহণের সময় যদি বাধা দেওয়া হয়, আমরা দেখব।

এটা নাশকতা কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাশকতা না। নাশকতা হলে বোমা বিস্ফোরণ হতো। সেখানে স্প্লিন্টার পাওয়া যেত। স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষ ক্ষতবিক্ষত হতো। আশেপাশে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত বাস দেখেছেন। বাসে কোনো স্প্লিন্টারের কণা পাওয়া যায়নি। অতএব নিশ্চিতভাবে বলা যায় বোমার কোনো ঘটনা এখানে নাই। গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

মারা গেছেন যারা

মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান দুজন। তারা হলেন- সুবহানা নামের নয় মাসের এক শিশু এবং অজ্ঞাতনামা (৪০) এক ব্যক্তি। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহ পরাণ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান জান্নাত (২২) নামের এক নারী। ঘটনাস্থলেই তার শিশুসন্তান তায়েবা (১) মারা যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া এ খবর নিশ্চিত করেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পর দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান স্বপন (৩৫) নামের একজন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শঙ্কর পাল।

দগ্ধ তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক : সামন্ত লাল

মগবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় দুজনকে মৃত অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন। রোববার (২৭ জুন) রাত ১০টায় ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, মর্মান্তিক এ  দুর্ঘটনায় মোট ১৭ জনকে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। তিনজন ছিলেন দগ্ধ। এর মধ্যে দুজনকে আইসিইউতে, একজনকে এসডিইউতে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দগ্ধ তিনজনের অবস্থা খুবই খারাপ। নাইনটি পারসেন্ট বার্ন। তাদের সম্পর্কে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। বাকি আহতরা যারা আছেন, তাদের কারও পা কাটা গেছে, কারও পা ভেঙে গেছে। 
 
কী কারণে তারা দগ্ধ হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।

মগবাজারের এ বিস্ফোরণের ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট এবং পাশের ঢাকা কমিউনিটি ক্লিনিক ও আদ্ব-দীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কেবল ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগেই নেওয়া হয়েছে ৩৯ জনকে।

ঢামেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীনরা হলেন- রনি (২৭), জিয়াম (২৫), মাহবুব (৩০), অজ্ঞাত (২৫), লাভলু (৬০), সাজিদ (১৮), মিজান (৪২), ইকবাল (৫০), অজ্ঞাত (২৮), ইলিয়াস (২৬), রফিকুল (৩৫), সোহেল (২৬), জহির খান (২৬), সাজ্জাদ (৩৫), আবু খায়ের (৩৫), সুভাষ (৫৮), কামাল (৪২), অজ্ঞাত (৩২), আসাদ (২৭), মোক্তার (৩৫), রতন (৩০), অজ্ঞাত (৫৫), অজ্ঞাত (৫০), অজ্ঞাত (২৫), শাহজাহান (৪৫), নয়ন (২২), মুসা (৫০), ফজল (২৫), মিজান (২৫), রাকিবুল (৩০), হৃদয় (৩০), অজ্ঞাত (৩০), ইকবাল (৩০), মামুন (৪০), মাসুদ (৫০), শাহিন (৬০), কামাল (৪২), আইয়ুব (২৫), তপন (৩৫), অজ্ঞাত (৫০), কালু (৩৫), শাহ আলম (৫০) ও নাহিদ (২৬)।

এর আগে রমনা ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার ফয়সালুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে বিস্ফোরণের কথা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও ঠিক কোথা থেকে বিস্ফোরণ ঘটল তা তাৎক্ষণিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিস্ফোরণে ভবনটির নিচতলার ভেতরেই ঘটেছে। ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে আমরা মোট ছয়জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি। আহত ও নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

এরও আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা একটি এসি বিস্ফোরণ হওয়ার সংবাদ পেয়েছি। কেউ কেউ আবার ফোন করে বলেছেন গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট কাজ করেছে।

রোববার (২৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকা হঠাৎ বিস্ফোরণের কেঁপে ওঠে বলে স্থানীয়রা জানান। অনেকের কাছে তা ভূমিকম্পের মতো মনে হয়েছিল। পরে দেখা যায়, মগবাজার-মৌচাক সড়কের পাশে ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডে ‘রাখি নীড়’ নামের পুরানো একটি তিনতলা ভবন আংশিক ধসে পড়েছে। ওই ভবনের দোতলায় ইলেকট্রনিক পণ্য সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান সরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের দোকান ছিল। বিস্ফোরণে প্রতিষ্ঠান দুটি যেন মিশে গেছে, বিভিন্ন পিলারও ধসে পড়েছে।

বিধ্বস্ত ভবনের উল্টো পাশের সড়কে আড়ংয়ের শোরুম। বিস্ফোরণে আড়ং ও তার পাশের প্রায় ডজনখানেক ভবনের জানালা-দরজার কাচ ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া সড়কের ওপর লাব্বাইক ও আল মক্কা পরিবহনের দুটি বাস এবং উড়াল সড়কের ওপর আজেমরী পরিবহনের একটি বাস প্রায় বিধ্বস্ত হয় পাওয়া যায়। দুটি বাসের সবগুলো কাচ ভাঙা অবস্থায় ছিল। বাসের ভেতরে ও রাস্তায় ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।

এআর/জেইউ/এমএসি/ওএফ