চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি পোশাক কর্মী খালেদা আক্তার (৩৫) নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) বেড না পেয়ে মারা গেছেন অভিযোগ করছেন স্বজনরা। তাদরে দাবি, চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বেড ঐ সময় খালি ছিল। 

চমেক হাসপাতালের পরিচালক বলছেন, আইসিইউ খালি আছে। কিন্তু ওই রোগীর জন্য কেউ আইসিইউর কথা কেউ বলেননি। তারা যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। রোববার (২৭ জুন) ভোরে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মারা যান তিনি। 

খালেদার আত্মীয় মো. জালাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালেদার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। ডায়রিয়া সমস্যা নিয়ে ২১ জুন চট্টগ্রামের ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থা খারাপ খাওয়ায় তাকে মঙ্গলবার  রাতে চমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়। 

তিনি বলেন, শুক্রবার তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। আমরা তখনও চিকিৎসকদের আইসিইউর কথা বলি। ডাক্তাররা জানান, চমেক হাসপাতালে আইসিইউ পাবেন না। রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। শুক্রবার করোনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরে তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আবার মৌখিকভাবে আইসিইউ বেডের জন্য করোনা ইউনিটের চিকিৎসকদের কাছে আবেদন করি। তখন করোনা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেন, রোগীর অক্সিজেন লেভেল ভালো আছে। ওনাকে আইসিইউ দেওয়া যাবে না। 

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, রোগীর শ্বাসকষ্ট থাকার পরও আইসিইউতে নেয়নি করোনা ইউনিটের দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সরা। তখন তারা বলছে, আইসিইউ খালি নাই এখানে, আপনারা বাহিরে চেষ্টা করেন। আমরা দায়িত্বরতদের বারবার আইসিইউর কথা বলছি। এরপর রোববার ভোরে তিনি মারা যান।

তিনি আরও বলেন, সঠিক সময়ে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে পারলে খালেদকে বাঁচানো যেত। তবে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন জালাল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাদের আইসিইউ প্রয়োজন তারা আমার কাছে এসে বলে। খালেদার যে আইসিইউ প্রয়োজন এরকম কোনো আবেদনই আসেনি। এমনকি মৌখিকভাবে কেউ আমাকে জানায়নি। চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বেড ফাঁকা আছে। খালি থাকার পরও কেউ আইসিইউ সেবা না পেয়ে মরে যাবে এটা হতে পারে না। 

তিনি আরও বলেন, আইসিইউ বেড খালি রেখে কি করব? কারো রোগী মারা গেলে মানুষ ইমোশনাল হয়ে যায় তো। হয়তো এ কারণে তারা এখন অভিযোগ করছে। তারা যেরকম অভিযোগ করছে বিষয়টি এরকম না। কেউ মৌখিকভাবে বা আবেদন করেও বলেনি যে তাদের রোগীর অবস্থা খারাপ একটা আইসিইউ দেন। অন্যান্য হাসপাতাল থেকেও কেউ যদি আইসিইউ চায়, খালি থাকলে আমরা দিয়ে দেই। আর রোগী চমেকে ভর্তি থাকলে অটোমেটিক আইসিইউ পেয়ে যায়। এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ  করেনি যে আইসিইউর অভাবে রোগী মারা গেছেন।

খালেদার বাড়ি মহেশখালীর শাপলাপুর এলাকায়। খালেদা নগরীর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। অন্য নারী পোশাককর্মীদের সঙ্গে চান্দগাঁও বরিশাল বাজার এলাকায় একটি মেসে থাকতেন। ২০১৩ সালে খালেদার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। খালেদার সাত বছরের একটি মেয়ে আছে।

কেএম/ওএফ