মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস/ ফাইল ছবি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কোনো ধরনের বক্তব্য বা জবাব দেওয়ার আগ্রহ নেই বলে জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাঈদ খোকন ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) নির্দেশ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে করা অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া বা বক্তব্য জানতে চাইলে বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপস কোনো ধরনের বক্তব্য বা প্রতিউত্তর দিতে নিরুৎসুক বলে ডিএসসিসি জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আজ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন। এরপরই গণমাধ্যম থেকে ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগের বরাতে বলা হয়েছে, বিষয়টি মহামান্য আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংশ্লিষ্ট। বিচারাধীন কোনো বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস কোনো ধরনের বক্তব্য বা প্রতিউত্তর দিতে নিরুৎসুক।

এদিকে নিজের ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) নির্দেশ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ খোকন বলেন, দুদক তদন্ত করলে আমার ও আমার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই। আমি অ্যাকাউন্টগুলো চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

সাঈদ খোকন বলেন, আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন- দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের আদেশ বলে আমার এবং আমার পরিবারের আটটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে মোট ৭ কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৬০৩ টাকা রক্ষিত রয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে ও তার পরিবারকে কোনো ধরনের নোটিশ দেয়নি বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই মেয়র। তিনি বলেন, কোনোরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি আদালতের মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আমি মনে করি, এমন কর্মকাণ্ড আমার এবং আমার পরিবারের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে।

সাঈদ খোকন বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র তাপস তার নগর পরিচালনায় সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতে প্রায়ই আমার প্রতি বিভিন্ন হয়রানি ও বিদ্বেষমূলক আচরণ করে আসছেন। আমি বিশ্বাস করি, দুর্নীতি দমন কমিশনের এমন কর্মকাণ্ড তাপসের প্ররোচণায় সংঘটিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকলে আমার এবং আমার পরিবারের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বকেয়া পাওনা বন্ধ হয়ে যাবে। আমার সংসার পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়বে। আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে অনুরোধ করব, আমার জব্দ করা অ্যাকাউন্ট সচল করে দিয়ে আমাকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পরিচালনার সুযোগ দিন, যেটা আমার ও আমার পরিবারের মৌলিক-সাংবিধানিক অধিকার। আপনাদের তদন্ত করাতে আমার কিংবা আমার পরিবারের কোনো আপত্তি নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করতেই পারে। কিন্তু কারও প্ররোচনায় ও দলাদলিতে দুর্নীতি দমন কমিশন লড়বে, একজন নাগরিক হিসেবে আমি এটা প্রত্যাশা করি না। আমি কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকা একজন নাগরিক হিসেবে দেখতে চাই। এই শহরের প্রতিটি নাগরিকের মতো আমিও একজন সাধারণ নাগরিক।

সাঈদ খোকন বলেন, আমার পরিবার প্রায় এক শতাব্দী ধরে এই শহরের সেবা করে আসছে। ঢাকার শেষ সরদার মাজেদ সরকারের মেয়ে আমার মা ফাতেমা হানিফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করে হয়রানি করা হয়েছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয়।

মেয়র তাপসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কতটুকু ভোটে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন তা এই শহরের মানুষ জানে। যাই হোক, ক্ষমতায় আছেন মানুষের সেবায় কাজ করুন। আরে ভাই, ঢাকার মরা লাশের ওপর পর্যন্ত ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছেন। আপনি কীভাবে ঢাকাবাসীর কাছ থেকে ভালোবাসা আশা করেন। আপনার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য কী আর কোনো মানুষ পাননি। বারবার কেন আমার ওপরে, কেন? আইনি মোকাবিলা করব, সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাবাসীকে নিয়ে আরেকবার সংগ্রাম হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মেয়র বলেন, আমি বলেছি মেয়র তাপস তার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য বারবার হয়রানি ও বিদ্বেষমূলক আচরণ করে আসছেন।

মেয়র তাপসের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি এই শহরে লাশ দাফন ফ্রি করে দিয়েছিলাম। ঢাকা শহরে দাফন-কাফন করতে ১২/১৪ হাজার টাকা লাগে। আজ আজিমপুর গোরস্থানে গিয়ে দেখেন লাশ নামানোর আগে টিকিট লাগে। ব্যর্থ নয়, তাহলে কি বলব? এই শহরের মোড়ে মোড়ে মানুষ এখন স্লিপ দিয়ে চাঁদা তোলে। এই শহর থেকে আমি লাখ লাখ ব্যানার-ফেস্টুন ফেলে দিয়েছিলাম। আজ সিটি করপোরেশন তার নিজের নামে ব্যানার-ফেস্টুন লাগায়। তাহলে কি বলব? নগর পরিচালনা করতে পারে না, আরও বড় হও বলে। তোমার বড় হওয়াতে আমি বাধা নাকি? যে দায়িত্ব পাইছ মিয়া ওইটা পালন করো। তারপর বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখো।

এএসএস/এসএসএইচ