মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার (২৮ জুন) থেকে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ (লকডাউন) চলছে সারাদেশে। বিধিনিষেধের মাঝেই খোলা আছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। তাই প্রতিদিনই কাজে বের হচ্ছে মানুষ। রাজধানীতে দেখা গেছে ব্যক্তিগত ও অফিসগামী গাড়ির ভিড়। সেসব গাড়িতে ভিড় যেন গণপরিবহনের মতোই। আছে স্বাস্থ্যবিধি মানার অভাব। নেই সামাজিক দূরত্বের অবকাশ। ঠিক যেন ‘স্বাভাবিক’ এক দিনের চিত্র। 

বুধবার (৩০ জুন) রাজধানীর শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি-৩২, কলাবাগান এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। সকাল থেকেই ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের প্রথম দুই দিনের তুলনায় এসব সড়কে আজ যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। আসাদগেট থেকে কলাবাগান পর্যন্ত দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। থেমে থেমে চলছে গাড়ি। এসব যানবাহনের অধিকাংশই প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও স্টাফবাস। সড়কে দেখা গেছে প্রচুর মোটরসাইকেল ও রিকশাও।

পুলিশ বলছে, সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধ যথাযথ বাস্তবায়নে চেকপোস্ট এবং তল্লাশির কারণে যানজট তৈরি হয়েছে। 

রাজধানীর রাসেল স্কয়ার মোড়ে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সুমন কুমার মোহন্ত ঢাকা পোস্ট কে বলেন, করোনাভাইরাসের অতিবৃদ্ধিকালে সরকার নির্দেশিত বিধিনিষেধের মাঝেও যারা একান্ত প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। এছাড়াও সকালে অফিসটাইম হওয়ায় সড়কে যানবাহনের পরিমাণ বেশি। সবগুলো সড়কই ব্যস্ত থাকায় যানজট তৈরি হয়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এটি কমে যাবে।

এদিকে, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কর্মজীবী ও চাকুরীজীবী মানুষকে। কর্মস্থলে পৌঁছাতে রিকশা কিংবা পাঁয়ে হেঁটে রওয়ানা দিতে দেখা যায় অনেককে। যাতায়াতের কষ্ট মাথায় নিয়েই ঘর থেকে বের হচ্ছেন তারা। আবার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিসের স্টাফবাসে দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্বের অভাব। 

কলাবাগান মোড়ে অফিসের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সরকারি চাকরিজীবী আবুল হোসেন। বললেন, এখন গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সবাই অফিসের বাসের ওপর নির্ভরশীল। যে পরিমাণ কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিসের সে তুলনায় গাড়ি নেই। তাই গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। অফিসে ঠিক সময়মতো পৌঁছাতে হবে। অফিসের গাড়ি মিস করলে আবার নিজের টাকা খরচ করে রিকশা ভাড়া দিয়ে যেতে হবে। যা আমাদের জন্য ব্যয় সাপেক্ষ।

বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনেও সড়কে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্টে জরিমানা গুনতে হচ্ছে মোটরসাইকেল চালকদের। এক মোটরসাইকেলে দুজনকে দেখলেই থামিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। 

পুলিশ জানায়, এখনও অনেকেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করছেন। তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশের ধানমন্ডি জোনের উপ-কমিশনার জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোটরসাইকেলে একাধিক মানুষ চলাচল করা যাবে না। এরপরও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রী পরিবহন করছেন। এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধে আমরা সড়কে নজরদারি বাড়িয়েছি। যারা আইন অমান্য করছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত সোমবার (২৮ জুন) সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। ১ জুলাই সকাল থেকে সাত দিনের জন্য  সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে। সর্বাত্মক লকডাউনে ‘মুভমেন্ট পাস’ থাকবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকে তিনি এ তথ্য জানান। 

আরএইচটি/এইচকে