লকডাউনে রাজধানীতে ভোগান্তি/ ছবি- ঢাকা পোস্ট

সড়কে অসংখ্য অফিসগামী মানুষের অপেক্ষা। নেই কোনো গণপরিবহন। কিন্তু অফিস খোলা। আর এতে করেই সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে কাজে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। রাজধানীর সড়ক সড়কে রিকশার রাজত্ব। গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে রিকশাচালকরা তাদের মত করে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ অবস্থায় যে যেভাবে পারছেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

বুধবার (৩০ জুন) লকডাউনের তৃতীয় দিনে রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, কাকরাইল এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। 

কাছাকাছি অফিস যাদের তারা হেঁটেই ছুটছেন। কিন্তু যাদের অফিস বা কর্মক্ষেত্র কিছুটা দূরে তারা পড়েছেন বিপদে। যেতে হলে তাদের একমাত্র রিকশা করেই যাওয়ার পথটা খোলা আছে। কিন্তু রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ চাওয়ার অভিযোগ প্রতিটি যাত্রীর। 

এই অবস্থায় গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডের সামনে এসে দাঁড়াল একটি পিকআপ ভ্যান। শুধু একবার সেই পিকআপ ভ্যান চালক হাঁক দিলেন ‘উত্তরা, উত্তরা....’। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে পুরো গাড়ি যাত্রীতে ভরে গেল। কোনো দরদাম ছাড়া এক রেট ১০০ টাকা ভাড়া বলে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে দিলেন চালক। তাতেই রাজি হয়ে সব যাত্রী উঠে পড়লেন গাড়িতে।

চালক এরশাদ আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ট্রিপ সংক্রান্ত একটি কাজে উত্তরা যাচ্ছি ফাঁকা পিকআপ নিয়ে। দেখলাম রাস্তায় শতশত যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। সে কারণে যাত্রী তুললাম। যদি ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় ধরে তাহলে বলব রাস্তায় জোর করে মানুষ উঠেছে। যাত্রী নেওয়ায় তাদেরও উপকার হলো আমারও ১৫০০ টাকার মতো ইনকাম হলো।

রামপুরা ব্রিজ থেকে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন হাবিবুর রহমান নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। কিন্তু রিকশা ভাড়া অতিরিক্ত চাওয়ায় তিনি আরও বেশ কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বললেন। কিন্তু সবাই অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছেন। যে কারণে তিনি হেঁটেই মালিবাগ পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। এসময় কথা হয় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কড়া বিধিনিষেধে কোনো গণপরিবহন চলবে না। কিন্তু অফিস খোলা থাকবে। এ কেমন সিদ্ধান্ত? আমরা অফিস যাব কীভাবে? সে বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত নাই। শুধু রিকশা চালু আছে। সেই সুযোগে রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ চায়। বেতন আর কত টাকাই পাই, প্রতিদিন যদি আসা যাওয়ায় ৪০০/৫০০ টাকা রিকশা ভাড়া লাগে তাহলে কিভাবে চলব? আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোনো রিকশাই ১৫০/২০০ টাকার কমে গুলিস্তান যাবে না। তাই হেঁটে হেঁটে মালিবাগ যাচ্ছি। এরপর রিকশায় যাব। তাও যদি একটু খরচ কমে।

কাকরাইল মোড় থেকে থেকে নতুন বাজারের দিকে ২০০ টাকায় ভাড়া দিয়ে যাচ্ছিলেন দুই যাত্রী। কথা হয় তাদের সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল তারা দুজন দুজনকে চেনেন না। একই দিকে গন্তব্য হওয়ায় তারা শেয়ারে এই রিকশায় যাচ্ছেন। 

তাদের মধ্যে একজন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গণপরিবহন বন্ধ করে অফিস খোলা রাখা হয়েছে। এই কারণেই রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ। অত বেশি ভাড়া দিয়ে তো সবার যাওয়া সম্ভব না, তাই শেয়ারে যাচ্ছি। ২০০ টাকা ভাড়া হলেও আমার দিতে হবে ১০০ টাকা। ভাই গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যে যেভাবে পারছে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাচ্ছে।

রিকশা ভাড়া কেন বেশি- এ বিষয়ে কথা হয় বেশ কয়জন রিকশাচালকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে ইয়াকুব আলী নামের একজন বলেন, সব সময়ই তো স্বাভাবিক ভাড়াতেই যাওয়া-আসা করি। কিন্তু এখন সব গণপরিবহন বন্ধ। এই অবস্থায় রিকশাই ভরসা মানুষের। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছি, অক্লান্ত পরিশ্রম করে রিকশাচালকরা যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। তাই একটু ভাড়া বেশি চেয়ে নিচ্ছি। রিকশাও যদি বন্ধ থাকতো তাহলে যাত্রীদের হেঁটেই যাতে হতো। আর আগামীকাল থেকে যদি কঠোর লকডাউন হয়, তাহলেতো মানুষ আর বেশি বাইরে বের হবে না। আমারা তো ফাঁকা বসে থাকব, তখন কী খাব, কী করব? তাই আজ একটু বেশি ভাড়া নিয়ে, বেশি রিকশা চালিয়ে একটু ইনকাম করে নিচ্ছি। 

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত সোমবার (২৮ জুন) সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে। আজ (বুধবার) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গত সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, সর্বাত্মক লকডাউনে ‘মুভমেন্ট পাস’ থাকবে না।

এএসএস/এইচকে