ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন/ ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে জুম মিটিংয়ে অংশ নিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন। মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের অপরাধে ৮২ দিন পর হাসপাতাল থেকে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৩ জুলাই) কারাগারে নেওয়ার পর থেকে আলাদা সেলে রাখা হয়েছে রফিকুল ইসলামকে। সাধারণত বন্দিদের নির্দিষ্ট সময়ে সেল থেকে বের হওয়ার সুযোগ থাকলেও রফিকুল আমিন আগামী ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। এই সময়টাতে তার ওই কক্ষ থেকে থেকে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়াও জুম মিটিংকাণ্ডে তদন্ত চলায় তার সঙ্গে অন্য কেউ কথা বলতে পারবেন না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় কারাগারের দায়িত্বশীল সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানায়, আদালতের নির্দেশে রফিকুল ইসলামকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। তিনি এমনিতেই আলাদা রুমে থাকতেন। তবে দিনের নির্দিষ্ট সময়ে ২-৩ বার তার ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ ছিল। হাসপাতালে তার জুম মিটিংকাণ্ডের পর থেকে তার চলাফেরা এবং কথাবার্তা সীমিত করা হয়েছে। তাকে নজরদারিতে পৃথক কারারক্ষী দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার খাবারের একটি চার্ট রয়েছে। চার্ট অনুযায়ী খাবার তৈরি করে তার কক্ষের সামনে রেখে আসা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারাগারকে মুক্ত রাখতে গত বছরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে বাইরে থেকে কোনো বন্দি এলে তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে কারাগারে। যেহেতু রফিকুল আমিন দীর্ঘ দিন কারাগারের বাইরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তাই তাকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।

কারাবিধি অনুযায়ী রফিকুলের জুম মিটিং করার অপরাধের বিষয়ে তার কোনো শাস্তি হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, রফিকুল আমিনের জুম মিটিংকাণ্ডে আমাদের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এদিকে হাসপাতালে রফিকুল আমিনের প্রিজন সেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে কারারক্ষী ছাড়াও ছিলেন শাহবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। কারা কর্তৃপক্ষের একটি তদন্ত কমিটি রয়েছে। তারাই ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করবেন।’

এর আগে বুধবার (৩০ জুন) রাতে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে- ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন কারাবন্দি হওয়া সত্ত্বেও ভিডিও অ্যাপ ‘জুম’ ব্যবহার করে সহযোগীদের সঙ্গে মিটিং করেছেন। এই মিটিংয়ের দুটি ভিডিওচিত্র ঢাকা পোস্টের হাতে রয়েছে। যার একটি এ বছরের মে মাসের এবং আরেকটি জুন মাসের। ভিডিওতে দেখা গেছে, রফিকুল আমিন ডেসটিনির মতোই নতুন আরেকটি এমএলএম ব্যবসার বিষয়ে আলোচনা করছেন। ইতোমধ্যে সেই ব্যবসা শুরুও করেছেন তিনি। ব্যবসার জন্য শিগগিরই এক হাজার ৩০০ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথা বলেছেন।

ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে উঠে আসে, রফিকুল আমিন কেবল কাগজে-কলমে কিংবা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ‘অসুস্থ’। হাসপাতালে থেকে দিব্যি ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার করে জুম অ্যাপে নিয়মিত মিটিংও করছেন। 

ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও জুম মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে পরবর্তী সাত কার্যদিবসে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। 

তদন্ত কমিটিটি ঢাকা বিভাগের ডিআইজি-প্রিজন্স তৌহিদুল ইসলামকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- মুন্সিগঞ্জের জেলসুপার নুরুন্নবী ভুঁইয়া এবং নারায়ণগঞ্জের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম।

এদিকে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ার পর গত শুক্রবার (২ জুলাই) এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এছাড়া সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে চার কারারক্ষীকে।

যারা সাময়িক বরখাস্ত

১) প্রধান কারারক্ষী নম্বর- ১১৫৫১- মো. ইউনুস আলী মোল্লা।
২) প্রধান কারারক্ষী নম্বর-১১৪৭৪- মীর বদিউজ্জামান।  
৩) প্রধান কারারক্ষী নম্বর-১১৪৪৮- মো. আব্দুস সালাম।
৪) প্রধান কারারক্ষী নম্বর- ১১৫২৪- মো. আনোয়ার হোসেন।

যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা

১) সহ-প্রধান কারারক্ষী নম্বর- ১২০১৮- মো. জসিম উদ্দিন।
২) সহ-প্রধান কারারক্ষী নম্বর-১২০০১- সাইদুল হক খান
৩) সহ-প্রধান কারারক্ষী নম্বর-১১৬১৬- মো. বিল্লাল হোসেন।
৪) সহ-প্রধান কারারক্ষী নম্বর-১১৯৭৫- ইব্রাহিম খলিল।
৫) সহ-প্রধান কারারক্ষী নম্বর-১১৯৮৭- মো. বরকত উল্লাহ।
৬) সহ-প্রধান কারারক্ষী নম্বর-১২১২১- মো. এনামুল হক।
৭) সহ-প্রধান কারারক্ষী নম্বর-১১৬৩২- মো. সরোয়ার হোসেন।
৮) কারারক্ষী নম্বর-১২৫৩৬- মোজাম্মেল হক।
৯) কারারক্ষী নম্বর-১৪৯৭৪- জাহিদুল ইসলাম।
১০) কারারক্ষী নম্বর-২২১৫৯- আমির হোসেন।
১১) কারারক্ষী নম্বর-১২৩৮২- কামরুল ইসলাম।
১২) কারারক্ষী নম্বর-১৫০৩৫- শাকিল মিয়া।
১৩) নবীন কারারক্ষী- আব্দুল আলীম।

এমএসি/এআর/এইচকে